পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা-যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম। আজকের বিষয়টা হচ্ছে থানকুনি পাতা নিয়ে। থানকুনি পাতার সাথে
সবাই পরিচিত। থানকুনি পাতার বিশেষ গুনাগুন রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। থানকুনি
পাতা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এটি রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়। যা আমরা
অনেকেই এ সম্পর্কে জানি না।
তাই আজকে আমরা জানবো যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা কতটুকু রয়েছে এবং এর
পাশাপাশি আরো জানবো পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। সুতরাং থানকুনি এবং
পাথরকুচি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি
পড়ুন।
পেজ সূচিপত্রঃ পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা-যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
ভূমিকা
থানকুনি বহুবর্ষজীবী একটি উদ্ভিদ। বর্তমান সময়ের নতুন প্রজন্ম এই থানকুনি পাতা
সম্পর্কে ধারণা নেই। কিন্তু এই থানকুনি পাতা যেমন খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়,
তেমনি বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে খুবই কার্যকরী। এই থানকুনি পুকুর বা বিভিন্ন
জলাশয়ে জন্মে থাকে। এই থানকুনি পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এই আর্টিকেলে
থানকুনি পাতার পাশাপাশি পাথরকুচি পাতা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
পাথরকুচি পাতা রূপচর্চাসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে বেশ উপকারী। তবে থানকুনি
পাতা একটু তেতো প্রকৃতির হওয়ায় এটি অনেকে খেতে চায় না। আর পাথরকুচি পাতা
স্যাতস্যেতে জায়গায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই থানকুনি পাতা আর পাথরকুচি পাতার
উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। তাই এই দুই পাতার সকল গুনাগুন সম্পর্কে
জানার জন্য শেষ পর্যন্ত থাকুন।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার গুনাগুন অনেক। এই থানকুনি পাতা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য
করে থাকে। কারণ এমন কিছু রোগ আছে, যে রোগগুলোর যম হচ্ছে এই থানকুনি পাতা। তাই
চলুন জেনে নিই থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো কি কি।
- পেটে যদি আলসার থাকে এবং এর সাথে যদি মূত্রনালীর কোন সমস্যা থাকে, তাহলে এই থানকুনি পাতা এগুলো দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে পাতা সিদ্ধ করে নিতে হবে এবং যে পানি পাওয়া যাবে সেই পানির সাথে একটু মধু দিয়ে খেতে পারেন। তাহলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
- যদি কোন গ্যাসের সমস্যা থাকে তাহলে থানকুনি পাতার রস এক্ষেত্রে খুব উপকারী একটি উপাদান।
- আমরা অনেকেই জানি, কাশি দূর করতে থানকুনি পাতার রস খুব সহায়ক। তাই থানকুনি পাতার রস এবং চিনি একসাথে মিশ্রিত করে খেলে কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- হজমে থানকুনি পাতার রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। অর্থাৎ হজমে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সেটি দূর হয়।
- প্রায় এখন চুলের সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। অর্থাৎ চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে মানুষ খুবই চিন্তিত থাকে। তাই থানকুনি পাতা এবং তুলসী পাতা একসঙ্গে বেটে সেই মিশ্রণটি মাথায় লাগাতে হবে। তাহলে আপনার চুল পড়া কমে যাবে।
- শরীরের বিভিন্ন ক্ষত সারাতে থানকুনি পাতা ব্যবহার হয়। যদি কোন জায়গা কেটে যায়, তাহলে সে জায়গায় থানকুনি পাতা দিলে ব্যথা সহ রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য থানকুনি পাতা ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতা বেটে নিতে হবে। বাটাকৃত পাতায় কিছু মধু দিয়ে মুখে লাগাতে হবে।
- অনিদ্রা দূর করতে থানকুনি পাতা সাহায্য করে।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে এই থানকুনি
পাতায়।
আরও পড়ুনঃ
পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
অপকারিতা সমূহঃ
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব থানকুনি পাতার অপকারিতা গুলো কি কি
রয়েছে সে সম্পর্কে।
- যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে, তারা থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- অপারেশন রোগীদের থানকুনি পাতা খাওয়া মোটেই উচিত হবে না।
- থানকুনি পাতা অতিরিক্ত খেলে এনার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- এমন অনেকে রয়েছে যারা ঘুমের ওষুধ খেতে অভ্যস্ত। এমন ব্যক্তির থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো।
- যারা থানকুনি পাতা পছন্দ করেন না, তাদের কখনোই অনিচ্ছাকৃতভাবে না খাওয়াই ভালো। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সুতরাং থানকুনি পাতার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। তা না হলে অনেক সমস্যার
সৃষ্টি হতে পারে।
থানকুনি পাতার ব্যবহার
থানকুনি পাতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমরা জানি না কোন কোন
ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। তবে এখন আমরা জেনে নেব
থানকুনি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে। যেমনঃ
- একজিমায় থানকুনি পাতা ব্যবহার হয়।
- সর্দি-কাশিতে ব্যবহার হয়।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়।
- শরীরের জ্বালাপোড়া কমাতে ব্যবহৃত হয়।
- আমাদের শরীরে যে ক্ষতিকর টক্সিন থাকে তার দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- হাঁপানি রোগে থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- কোন জায়গা কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করার জন্য ব্যবহার হয়।
- মুখের ব্রণ দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
থানকুনি পাতা উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে ব্যবহার করলে অনেক ভালো উপকার হয়। তাই আমরা
ঘরোয়াভাবে উপরোক্ত সমস্যাগুলো থানকুনি পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধান করতে পারি।
থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়
থানকুনি পাতা আপনারা বিভিন্নভাবে খেতে পারেন। তবে যেভাবে খাওয়া হোক না কেন উপকার
পাওয়া যাবে। তবে অনেকে থানকুনি পাতা শাক হিসেবে খেয়ে থাকে। একে রস বানিয়ে
খাওয়া যায়। এই রস এক গ্লাস পরিমাণ দুধের মধ্যে দিয়ে খেতে পারেন। এতে করে ত্বক
অনেক সুন্দর হবে। থানকুনি পাতার বড়া করেও খাওয়া যাবে।
আরও পড়ুনঃ প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত
বড়া বানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের মসলা দেওয়ার পর তেলে ভেজে বড়া তৈরি করুন। সকাল
বেলা খালি পেটে চিবিয়েও খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে থানকুনি
পাতা খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে খেতে পারেন।
পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা
উপরে আলোচনায় থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা শুধু রূপচর্চায় নয়, এটি রোগেও ওষুধ হিসেবে কার্যকরী।
যেমন পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে থানকুনি পাতা সেই সমস্যার সমাধানে
সক্ষম। পেটের আলসার এমনকি আমাশয় রোগে দূর করার ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে সহায়তা করে
থাকে। পেটে যদি হজমের সমস্যা হয়, সেটিও দূর হয় এই থানকুনি পাতা খেলে। পেটের আরও
বিভিন্ন ধরনের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো নিরাময়ে থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে
পারেন।
আমাশয়ে থানকুনি
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো থানকুনি খেলে আমাশয় দূর হয় কিনা। আমাশয়ে
সারাতে থানকুনির উপকারিতা অনেক রয়েছে, এটা অনেকেই জানে না। থানকুনি পাতা খেলে
আমাশয় দূর হওয়ার সাথে সাথে পেটের আলসার পর্যন্ত ভালো হয়। সুতরাং আমরা জানতে
পারলাম থানকুনি পাতা খেলে আমাশয় ভালো হয় কিনা।
থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়
থানকুনি পাতা কি কি উপায়ে খাওয়া যায় এই বিষয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
থানকুনি পাতা জুস করে,ভর্তা করে,ভাজি করে ইত্যাদি উপায়ে থাকলে পাতা খাওয়া যায়।
এছাড়াও আপনি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ বরই পাতার রস খেলে কি হয়
থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে পেটের পিড়াসহ আমাশয়, আলসার এমনকি বদ হজমের সমস্যা
দূর হয়। তাই বড় বড় রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য থানকুনি পাতা খাবার অভ্যাস গড়ে
তুলুন।
নতুন চুল গজাতে থানকুনি পাতা
বর্তমানে চুল পড়ার সমস্যা এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় অল্প
বয়সে মাথা থেকে চুল পড়া শুরু হয়ে যায়। আর এই চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমরা
বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে চুল
পড়া বন্ধ হয় এবং চুল গজাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ মাথার খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
এই থানকুনি পাতা এবং তুলসী পাতা একসঙ্গে বেটে চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ
হয়। তাই নতুন চুল গজাতে এবং চুল পড়া বন্ধ রোধে থানকুনি পাতা অনেক কার্যকরী একটি
উপাদান।
থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয়
আসুন এবার আমরা জেনে নিব থানকুনি পাতা খেলে বা ত্বকে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া
যায় কিনা। থানকুনি পাতা ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য বেড়ে যায়। ত্বকের
ব্রণের দাগ দূর করতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। এমনকি ত্বকের আর্দ্রতা বজায়
রাখে এবং কমল রাখে। তোকে যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয় সেগুলো নিরাময়ে
থানকুনি পাতা সাহায্য করে। সুতরাং বলা যায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে থানকুনি
পাতা বিশেষ অবদান রাখে।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা
পাথরকুচি পাতার অনেক গুনাগুন রয়েছে। এই পাতা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যেমন
উপকারী তেমনি বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও উপকারী। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক পাথরকুচি
পাতার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
- যাদের চুল পেকে যাচ্ছে তারা পাথরকুচি পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি চুল পাকা রোধ করে।
- কৃমির সমস্যা দূর করতে এই পাতা অনেক উপকারী।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই কার্যকরী।
আরও পড়ুনঃ বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- এই পাতার রস ব্যবহার করলে কানের ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।
- চোখের ব্যথা দূর করতে এই পাতা ব্যবহারে করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- যদি ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে এই পাতার রস ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।
সুতরাং উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও পাথরকুচি পাতার আরো বিভিন্ন রকম উপকারিতা
রয়েছে। যা আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আজকে আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারলেন পাথরকুচি
পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
শেষ কথা
অবশেষে, উপরোক্ত আলোচনা মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, থানকুনি পাতা এবং পাথরকুচি পাতা
আমাদের জন্য কতটা উপকারী। আমরা আরও জানতে পারলাম, যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার
উপকারিতা কি, থানকুনি পাতার ব্যবহারের ক্ষেত্র, থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং
অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে।
আশা করি পোস্টটি করে অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন। তাই বেশি বেশি শেয়ারের মাধ্যমে
অন্যজনকে উপকৃত করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ