চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় -এই সম্পর্কে জেনে নিন



আজকে আমরা চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় সম্পর্কে জানব। চুল হচ্ছে মানুষের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশ করে সেহেতু এই চুল যদি পড়া শুরু করে তবে আপনার সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে। অনেক কারণে চুল পড়ে যায়। কিন্তু এই চুল পড়ার সমাধান প্রয়োজন।
চুল যতই পড়ুক প্রতিনিয়ত এর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে চুল ঘন করা যায় এবং চুলের উজ্জ্বলতাও বাড়ে। তাই চলুন, চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় কি তা জেনে নিই।

 পেজ সূচিপত্রঃ চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়

ভূমিকা

চুল শরীরের এমন একটি অংশ যা না থাকলে মানুষের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। আর চুল থাকলে সুন্দর্য বাড়ে। কিন্তু এই চুল অনেকেরই পড়ে যায়। চুলকে ধরে রাখার জন্য আমরা অনেক কিছু ব্যবহার করি।

আগে জানতে হবে চুল কেন পড়ছে এবং আরো জানতে হবে কী কারণে চুল পড়ছে। তাই আপনি কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে চুল পড়ে যাওয়া বন্ধ এবং ঘন করতে পারেন। তাই নিচের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে বুঝতে পারবেন কিভাবে চুল পড়া বন্ধ করতে হয় ও ঘন করার উপায় কি।

অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ

অল্প বয়সে চুল পড়ে যাওয়াটা এখন দুশ্চিন্তার বিষয়। চুল পড়ে যাওয়ার ফলে মাথার চুল হালকা হয়ে যাচ্ছে। চুল পড়ে যাওয়া প্রধান কারণ হচ্ছে বিভিন্ন রকম মানসিক চিন্তা, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডায়েট না করা ইত্যাদি। 
অল্প বয়সে চুল পড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে খাদ্য অভ্যাস এবং ঘুমের ক্ষেত্রে নিয়ম না মানা। ঘুম যদি পর্যাপ্ত না হয় এবং বিভিন্ন মানসিক চিন্তা যদি করা হয় তাহলে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আজকাল তরুণরা ওজন কম রাখার জন্য অল্প পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে। যার ফলে শরীরে সুষম খাবারের ঘাটতি দেখা দেয়। এসব কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে। এই চুলে বিভিন্ন রকম ভিটামিন, প্রোটিন এবং খনিজ অত্যাবশ্যকীয়। এই উপাদান গুলো পেতে হলে সুষম খাওয়ার গ্রহন করতে হবে।
চুল পড়া

চুল পড়ার কারণ কি কি

চুল পড়ার কারণগুলো খুজে বের করে চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় গুলো প্রয়োগ করতে হবে।এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে।
  • নারীর এবং পুরুষের চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অ্যান্ড্রজেনিক হরমোন। শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি থাকলে চুল পড়ে যেতে পারে।
  • দুশ্চিন্তার কারণেও চুল পড়তে পারে। দুশ্চিন্তায় দীর্ঘদিন ভোগার ফলে চুল পড়ার পরিমাণ বাড়ে।
  • হরমোনের কারণেও চুল পড়ে। যেমন- থাইরয়েড হরমোন। এই হরমোন কম বেশি হয়ে গেলে বা বা শিশু জন্ম দেওয়ার পর এই হরমোনে পরিবর্তন আসে। ফলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ক্যান্সার হয়ে থাকলে কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কেমোথেরাপি দেওয়ার ফলেও চুল পরে
  • চুল পড়ে বংশগত কারণেও।

অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ

  • প্রথম কারণ হচ্ছে মানসিক চিন্তা।।
  • ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে। বিশেষ করে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন ডি এর সল্পতা। তাই চুলের জন্য সূর্যের আলো এবং ভিটামিন ই বিশেষ প্রয়োজন।
  • চুলে বিভিন্ন রকম ঔষধ প্রয়োগ করলেও চুল পড়ে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।
  • হরমোনের পরিবর্তনের ফলেও চুল ঝরে পড়ে।
  • ওষুধ সেবনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে চুল পড়ে।
  • চুল নিয়মিত না আচড়ালে চুল পড়তে পারে। কারণ চুল আঁচড়ালে গোড়ায় রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় এবং চুলও ভালো থাকে।
  • চুল ভেজা অবস্থায় আঁচড়ানোর কাজটা আমরা অনেকেই করি। চুল ভেজা থাকলে গোড়া আর শক্ত থাকে না নরম হয়ে যায়। ভেজা চলে আঁচড়ালে চুল পড়ে।
  • ছত্রাক আক্রমণের ফলেও চুল পড়ে যায়।
  • আপনি যদি নিয়মিত চুল পরিষ্কার না করেন সে ক্ষেত্রেও চুল পড়তে পারে এবং খুশকির পরিমাণটা বেড়ে গেলেও চুল পড়তে পারে।

চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়

আপনি যদি চুল পড়ার সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিচের উপায় গুলো অনুসরণ করতে পারেন-
  • ঘুমোতে যাওয়ার আগে চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করুন এবং শ্যাম্পু ব্যবহারের মাধ্যমে পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন।
  • চুল পড়া বন্ধে এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এই এলোভেরা জেল চুলে লাগিয়ে তা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । এতে আপনার চুল পড়া কমাবে ।
  • লেবুর রসের সাথে ডিমের কুসুম মিশিয়ে তা চুলে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । এই পদ্ধতি চুল পড়া রোধে খুব কার্যকর।
  • চুল পড়া রোধে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা যায়।
  • চুল পড়া রোধে নিমপাতা বাটা খুবই উপকারী উপাদান। নিমপাতা বাটা ব্যবহারে চুল বৃদ্ধি পায়। এতে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। স্ক্যাল্পে এই ফ্যাটি অ্যাসিড খুব দরকার। এই মিশ্রন ব্যবহারের ফলে গোড়া এতই শক্ত হয় যে চুল পড়া কমায়।
  • জবা ফুল চুল পড়া রোধে খুব বড় ভূমিকা পালন করে। জবা ফুলের সাথে নারকেল তেল মিশ্রণ করে গরম করে নিন। সেই মিশ্রণ ঠান্ডা হওয়ার পর চুলে লাগান । অন্তত 30 মিনিট রাখার পর তা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল পড়া কমে যাবে।

চুল পড়া বন্ধ করার খাবার

কিছু কিছু খাবার আমাদের চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ।সেই খাবারগুলো সম্পর্কে আমরা জেনে নিই-
১.সবুজ শাকসবজি: সবুজ শাক, পালং শাক ইত্যাদি এন্টিঅক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস। প্রতিদিন শাকসবজি আপনার খাবার তালিকায় রাখতে পারেন । কারণ এগুলো খেলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।
২.গাজর: গাজর শুধু চোখের জন্যই নয় এটি ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। গাজরে ভিটামিন এ থাকায় এটি গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়া কমায়।
৩.মিষ্টি আলু: ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে মিষ্টি আলু। ভিটামিন এ চুলের ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজনীয়। তাই আপনার খাবারের মধ্যে এই মিষ্টি আলু রাখতে পারেন।
৪.লেবুর শরবত: চুল পড়া বন্ধ করার জন্য লেবুর শরবত খুব কার্যকরী। লেবুর পাশাপাশি কমলাও খাওয়া যায় । কারণ এতে  ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা চুলের জন্য উপকার।
৫.বাদাম: চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আপনি খাবারের মেনুতে বাদাম রাখতে পারেন। বাদামে অনেক পুষ্টি রয়েছে যেমন প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। বাদামে এই গুনাগুন গুলো থাকার ফলে চুল শক্ত হয় এবং চুল পড়া থেকে আপনাকে সহায়তা করবে।

এক মাসে চুল ঘন করার উপায়

ঘন চুল আপনার আমার সবার কাছেই পছন্দ।চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় গুলো ঠিকমত অনুসরণ করলে চুল ঝলমলে হয়ে উঠবে। কিন্তু এই চুল ঘন বা লম্বা করার ক্ষেত্রে কয়েকটি উপায় মানলেই আপনার চুল ঘন করতে পারবেন। প্রথমত এলোভেরা জেল ব্যবহার করলে চুল ঘন হয় এবং চুল পড়া রোধ করে। এতে যে প্রোটিন থাকে তা চুলকে ঘন করার ক্ষেত্রে খুব উপকারী। ডিমের সাথে অলিভ অয়েল একত্রে মিশ্রণ করে ব্যবহার করলে পাতলা চুল ঘন হয়।
চুল ঘন করার উপায়
চুলকে ঘন করার জন্য মেহেদী ব্যবহার করা যায়। সাত দিনে একবার মেহেদি ব্যবহার করুন। তাহলে আপনার চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং চুল গজানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

চুলকে ঘন করার ক্ষেত্রে মেথি একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। মেথি ব্যবহার করার জন্য সেটি আগের দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পানিতে ভেজানো মেথি ছাকনির সাহায্যে আলাদা করে নিন। তারপর মেথির সাথে অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে বেটে নিন। বাটা মেথি চুলে ব্যবহার করুন এবং পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাহলে আপনার চুল ঘন হবে।

শেষ কথা

উপরের আলোচনায় চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার যে উপায়গুলো সম্পর্কে জানলাম তা মেনে চললে অবশ্যই উপকার হবে বলে মনে করি। এবং স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে যে চুল কি কি কারনে পড়তে পারে এবং কিভাবে চুল পড়া রোধ করা যায়। উপরের পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url