চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন
আজকে আপনাদের যে বিষয় সম্পর্কে অবগত করব সেটি হচ্ছে, চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে। অনেকেই সকালে কিংবা বিকেলে কফি পানে অভ্যস্ত। অনেকেই শরীরের
ক্লান্তি দূর করার জন্য পান করে থাকে। গল্প কিংবা আড্ডা কফি ছাড়া চলে না। কিন্তু
এই কফির কিছু উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে।
এই কফি কখন খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে এবং খেলে কি হবে সে সম্পর্কে জানা
প্রয়োজন। প্রতিটি জিনিস খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। তাই চলুন জেনে নেওয়া
যাক, চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্রঃ চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা
ভূমিকা
অনেকেরই কফি পানের মাধ্যমে সকালটা শুরু হয়। এক কাপ কফি ছাড়া তার দিনটা যেন শুরু
হতে চায় না। কিন্তু সকালে কি কফি পান করা উচিত? সকালে কফি পান করার ফলে শরীরে
ক্যাফেইন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং কিছু সময় পর তা আবার কমে যায়। ফলে শরীর
ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সকাল থেকে বিকেল হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টুকুই হচ্ছে কফি
খাওয়ার সঠিক সময়। কফিতে যে ক্যাফে ইন থাকে তা শরীরকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে।
তাই সঠিক সময়ে কফি পানের অভ্যাস গড়ে তুলি।
কফি খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই জানিনা, কফি খাওয়ার ফলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। আপনি কফি খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে জানলে অবশ্যই কফি খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবেন। তাই চলুন জেনে নিই
সেই সব উপকারিতা সম্পর্কে।
- কফি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি হ্রাস পাবে। বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কফি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কফি বেশ কার্যকরী। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় দেহে যে টিস্যুগুলি থাকে সেগুলোর অক্সিজেন ধরনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ব্যায়াম করা শেষ হলে২-৩ কাপ কফি পান করলে পেশির ব্যথা থেকে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে কফি সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ কফি গ্রহণ করার ফলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।
- কফিতে যে ক্যাফেইন থাকে তা শরীরের চর্বি বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এজন্য শরীরের ওজনটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওজন কমানোর জন্য কফি পান করতে পারেন।
- সারাদিন পরিশ্রম কিংবা অনেকেরই রাতে ভালো ঘুম হয় না। তখন শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসে। এই ক্লান্তি দূর করার জন্য কফি পান করতে পারেন।
কফি খাওয়ার অপকারিতা
কফি খেতে সবাই পছন্দ করে। কিন্তু এই কফি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকার বা
ক্ষতিকর তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। উপকারের পাশাপাশি কফি খাবার অপকারিতা ও
রয়েছে।যেমন-
- বেশি পরিমাণ কফি পান করলে ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ঘুম আসতে সমস্যা হয়।
- হার্টের সমস্যার জন্য অনেকাংশে কফি দায়ী।
- অতিরিক্ত কফি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন। কফি খাওয়ার সময় কিছু হরমোন বাইরে বের হয়ে আসে। এই হরমোন গুলো গ্যাস সহ অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
- অধিক পরিমাণ কফি খেলে মাথা ব্যথা সহ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়।
- শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়লেও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে।
- অধিক কফি পান গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
- এমনকি কফি পানের মাত্রা বেশি হলে ক্যান্সারও হতে পারে।
চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা
কফি খাওয়ার সময় অনেকেই আমরা চিনি ব্যবহার করে থাকি। অনেকেই মনে করেন, কফি খেলে
ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় আবার কেউ মনে করেন, চিনি ছাড়া কফি খাওয়া উচিত। সকালটা
শুরু করতে পারেন এক কাপ কফি পানের মাধ্যমে। কিন্তু কফিটা হতে হবে চিনি ছাড়া।
কফির সাথে চিনি না খাওয়াই ভালো। যতদূর সম্ভব চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে
করে আপনার শরীর ভালো থাকবে। চিনি ছাড়া কফি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকার।
চিনি ছাড়া যদি ব্ল্যাক কফি খান তাহলে আপনার শরীরে যে টক্সিন থাকে সে গুলো বের
হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ
সিদ্ধ আলু খাওয়ার উপকারিতা
যদি আপনার প্রস্রাবে সমস্যা থেকে থাকে সেটাও ভালো হয়ে যায়। চিনি ছাড়া কফি খেলে
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ওজন বাড়ে না। চিনি ছাড়া কফি খেলে ব্লাড প্রেসার
স্বাভাবিক থাকে। আর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। উপরোক্ত সুবিধা
গুলো ছাড়াও, চিনি ছাড়া কফি খাবার উপকারিতা আরো রয়েছে।
দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা
কফি খাওয়ার ফলে যে উপকার গুলো পাওয়া যায় দুধ কফি খেলেও একই উপকার পাওয়া যায়।
আমাদের দেহের মধ্যে বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ঢুকে যায় এবং দেহের মধ্যে
শ্বেত রক্ত কণিকা সৃষ্টি হয়। এই ভাইরাস গুলো দেহকে আক্রমণ করে যার ফলে বিভিন্ন
রকম সমস্যা দেখা দেয়। দুধ কপিতে কিছু কার্যকরী উপাদান রয়েছে যা দেহের এই
সমস্যাগুলো দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
কফির জন্য বিখ্যাত কোন দেশ
কফির চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এখন চায়ের বদলে কফিকেই বেশি প্রাধান্য
দিচ্ছে। তাই কপির জন্য বিখ্যাত কোন দেশ তা জানা অত্যন্ত জরুরি। কফির জন্য বিখ্যাত
দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে লন্ডন। লন্ডনের অলপ্রেস এবং ক্যারাভানে সব জনপ্রিয়
কপি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মেলবোর্ন শহর পিছিয়ে নেই। কফিকে তারা জনপ্রিয়
পানীয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। মেলবোর্নের ক্যাপাচিনো শহরে সুস্বাদু কফি পাওয়া
যায়। আয়ারল্যান্ডেও কফির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্টোফেন শহরে পছন্দের সব কপি
পাবেন। রোমরা কফি বেশ পছন্দ করে। রোমেও বিভিন্ন ধরনের কফি পাওয়া যায়।
কফি চাষ কোথায় হয়
বাংলাদেশের কয়েকটা জেলা যেমন- বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, টাংগাইল, রাঙ্গামাটি
ইত্যাদিতে অল্প পরিমাণে কফি উৎপাদিত হয়। কফি চাষ সাধারণত এশিয়া মহাদেশও হয়ে
থাকে। ব্রাজিলেই সবচেয়ে বেশি কপি উৎপন্ন হয়। ব্রাজিলের জমিগুলো ঢালু প্রকৃতির,
বিধায় কফি ভালো হয়। কফি চাষে ভারতও পিছিয়ে নেই। কফির চাষাবাদ করা জন্য দক্ষিন
ভারত সুপরিচিত। এখানেও যে জমিগুলো আছে সেগুলো ঢালু প্রকৃতির তাই কফি ভালো উৎপন্ন
হয়। তাহলে আমরা জানতে পারলাম কফি চাষ কোথায় হয়।
কফি কিসের থেকে তৈরী হয়
আমরা কফি পান করি কিন্তু জানিনা এই কফি কিভাবে বা কিসের থেকে তৈরি হয়। আমরা জানি
চা কিভাবে তৈরি হয়। দামী কফি কিসের থেকে তৈরি হয় জানলে অবাক হবেন। যদি আপনি
সবথেকে ভালো কফির স্বাদ পেতে চান তাহলে আপনাকে সিভেট কফির স্বাদ নিতে হবে। এই
সিভেট কফি তৈরি হয় মল থেকে। এই মলটা হচ্ছে বিড়ালের। যাকে আমরা সিভেট বেড়াল বলে
থাকি। এর মল দিয়ে সবচেয়ে দামী কফি তৈরি হয়। কফির আশেপাশে এই বিড়ালকে রাখা
হয়। সিভেট বিড়াল হচ্ছে বাংলাদেশে যেটি উদবিড়াল নামে পরিচিত।
কফি কিভাবে বানানো হয়
স্বাভাবিকভাবে কফি বানাতে হলে যে জিনিসগুলোর প্রয়োজন হয় তা হচ্ছে চিনি, পানি,
কফি। অর্থাৎ সমানুপাতে এই তিনটি জিনিস একটি পাত্রে মিশাতে হবে। তারপর মিশানো
মিশ্রণটি ততক্ষণ পর্যন্ত চামচ দিয়ে নাড়তে হবে যতক্ষণ না ফোন সৃষ্টি হয়। সেটি
কফিতে পরিণত হবে।
শেষ কথা
পরিশেষে, কফি পান করলে যেমন উপকার রয়েছে তেমনি অধিক কফি পান করার ফলেও এর কিছু
অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ সাধারণ কফি খাই কেউ বা আবার
ব্ল্যাক কফি খায়,কেউ দুধ কফি খাই। তবে যে কফিই খাওয়া হোক না কেন সেটি চিনি
ছাড়া খাওয়া উচিত। কারণ চিনি দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
উপরোক্ত আর্টিকেলে এটাই স্পষ্ট যে, চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। উপরের
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আর্টিকেলটি সবার
সাথে শেয়ার করে দিন।