কাঁচা ছোলা ও কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন



আসসালামু আলাইকুম। আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। কাঁচা ছোলা ও কাঁচা বাদাম আমরা অনেকেই খেয়ে থাকি। আবার এগুলো অনেকেই কাঁচা খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু আমরা যে কাঁচা ছোলা, কাঁচা বাদাম খাই, এগুলো খেলে কি উপকার হবে আমরা কি তা জানি।কাঁচা ছোলা ও কাচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এগুলোর উপকার কতটুকু এই সম্পর্ক আমাদের অনেকের জানা নেই। এই দুটোই অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার এবং বলবর্ধক খাবার। এই দুটোই শরীরে অনেক শক্তি জোগাতে সাহায্য করে থাকে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই কাঁচা ছোলা ও কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ কাঁচা ছোলা ও কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ভূমিকা

কাঁচা ছোলা ও কাঁচা বাদাম এই দুটো জিনিসের সাথে আমরা খুবই পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকে এই দুটো কাঁচা অবস্থায় খেতে পছন্দ করে না। সাধারণত এই দুটো জিনিস আমরা ভেজে খেতে বেশি পছন্দ করি। কাঁচা ছোলা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য হওয়ায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। কাঁচা ছোলার সাথে একটু আদা খেলে এটি এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

অপরদিকে কাঁচা বাদামের উপকারিতাও অনেক রয়েছে। কাচা বাদাম ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমরা নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে জেনে নিব।

খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা ছোলার পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে অনেকেরই জানা আছে।১০০gm ছোলাতে ১৮gm. আমিষের উপস্থিতি বিদ্যমান। এতে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও নিম্নের উপকারিতা গুলো পরিলক্ষিত হয়।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করেঃ ছোলা খাওয়ার ফলে দূষিত কোলেস্টেরল অনেকাংশে দূর হয়ে যায়। দ্রবণীয় ও অদ্রবনীয় এই দুটো আঁশ ছোলাতে বিদ্যমান থাকাই হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
রক্ত চলাচলঃ ছোলা খাওয়ার ফলে পায়ের আর্টারিতে দ্রুত গতিতে রক্ত চলাচল হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়াই ক্যান্সার প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে নারীদের কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
এলার্জি কমায়ঃ ফলিক এসিড থাকার কারণে এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। এই ফলিক এসিডের কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়াও হাড়কে শক্তিশালী করতে এর ভূমিকা অনেক।
হজম শক্তিঃ হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এই কাঁচা ছোলা।
ব্যথা কমায়ঃ খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে মেরুদন্ডের ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়। এতে ভিটামিন বি থাকায় মেরুদন্ডের ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি হয়।
কাচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা

কাঁচা ছোলা খেলে যেমন উপকার রয়েছে তেমন অপকারও রয়েছে। তবে এর অপকারিতা খুব কম। প্রতিটা জিনিসের ভালো-মন্দ দুটোই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে কিছু অপকারিতা ও লক্ষ্য করা যায়।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা নেই বললেই চলে।
  • তবে যাদের কিডনি সমস্যা আছে তারা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • কাঁচা ছোলা কখনোই ভেজে খাওয়া উচিত নয়। এতে করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • বমি সমস্যা থাকলে কাঁচা ছোলা খাওয়া মোটেই উচিত হবে না।

সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই ছোলা খেয়ে থাকি। কিন্তু কিভাবে খেতে হবে, কখন খেতে হবে এ বিষয়ে আমাদের ধারণা খুব কম। সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার জন্য কিছু ছোলা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে খালি ছোলা খেতে খারাপ লাগলে এর সাথে চিনি বা লবণ দিয়েও খেতে পারবেন। ছোলার সাথে আদা যুক্ত করে খেলে এটি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং যদি কৃমি থাকে তাহলে সেটি ভালো হয়।
ভিজিয়ে রাখা ছোলার পানি আমরা অনেকেই ফেলে দিই কিন্তু এটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ এই ছোলার পানিতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে ছোলা খাওয়া যেতে পারে এবং এভাবে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

প্রতিদিন ছোলা খেলে কি হয়

প্রতিদিন ছোলা খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় সেই সম্বন্ধে আমাদের জানা নেই। নিয়মিত ছোলা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন ছোলা খাওয়ার ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। আবার নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। ছোলাতে ফাইবার থাকাই হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ ভালো করতে ভূমিকা রাখে এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতিদিন ছোলা খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায়। সর্বোপরি এটি শরীরের ভিটামিনের অভাব পূরণ করে শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।
কাচা  ছোলা

কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা অবসর সময়ে কিংবা আড্ডায় বাদাম খেয়ে থাকি। কিন্তু ভাজা বাদামের চেয়ে কাঁচা বাদামে অনেক উপকার থাকে। কিছু উপকারিতা গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
  • কাচা বাদাম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
  • বিশেষ করে কাচা বাদামে সব পুষ্টিগুণ গুলো রয়েছে। এজন্য শরীরের সকল পুষ্টির অভাব গুলো পূরণ করতে সক্ষম।
  • এটিতে ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিন বিদ্যমান থাকায় ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাঁচা বাদাম সাহায্য করে। কাচা বাদাম খাওয়ার ফলে ক্ষুধা তেমন লাগে না। এজন্য অতিরিক্ত খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
  • গবেষকদের মতে, কাঁচা বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি আরও উন্নত হয়।
  • কাচা বাদামে যে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে তা দেহের শর্করা দূর করতে ভূমিকা রাখে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভবপর হয়ে ওঠে।

অপকারিতা সমূহ নিম্নরূপঃ

  • বাদামে যে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে তা ওষুধের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই রোগ দ্রুত ভালো হয় না।
  • বাদাম খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • বাদামে উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। বাদাম খেলে এলার্জি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার ফলে আমাশয়, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই উপরোক্ত আলোচনায় আমরা স্পষ্ট ধারণা পেলাম যে কাঁচা ছোলা ও কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কতটুকু রয়েছে সে বিষয়ে।

কাঁচা বাদাম খাওয়ার নিয়ম

কাচা বাদাম আমরা সাধারণত ভেজে খেতে পছন্দ করি। কিন্তু ভাজা বাদামের চেয়ে কাঁচা বাদামে বেশি উপকার রয়েছে। এটি কাঁচা অবস্থায় অথবা পানিতে ভিজিয়েও খেতে পারেন। এক্ষেত্রে ভিজিয়ে খাওয়াটা সবচেয়ে উত্তম হবে।
কাঁচা বাদাম খাওয়ার নিয়ম

কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

কাজু বাদাম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কাজুবাদাম খেলে, নিম্নের উপকার গুলো মিলে। যেমন
  • যদি দুধে কাজু বাদাম ভিজিয়ে খাওয়া যায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হয়ে যাবে।
  • রক্তের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে কাজু বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এটিতে কপার রয়েছে। এই কপারের ঘাটতি দেখা দিলে রক্তশূন্যতার মতো অনেক সমস্যা তৈরি হয়।
  • কাজু বাদামে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের রোগ, হৃদরোগের মতো আরো অন্যান্য সমস্যা গুলো প্রতিহত করতে সাহায্য করে থাকে।
  • টিউমারকে সারিয়ে তোলার জন্য কাজুবাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজুবাদাম খাওয়া যায়।
  • হার্ট কে সুস্থ রাখার একমাত্র ওষুধ হচ্ছে কাজু বাদাম।

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

কাঠ বাদামের উপকারিতাও কিন্তু কম নয়। কাঠবাদাম খেলে এতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। চলুন উপকার গুলি কি তা জেনে নিই।
  • কাঠ বাদাম দূষিত কোলেস্টেরল দূর করে দেয়।
  • কাঠ বাদামে খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। কারণ এতে যে ফসফরাস রয়েছে তা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কাঠ বাদাম খেলে ওজন হ্রাস পায়।
  • হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে।
  • ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে কাঠবাদাম সাহায্য করে।
  • কাঠ বাদামে ভিটামিন এ, বি -টু, বি -সিক্স ইত্যাদি রয়েছে যা চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

কাজু বাদাম ও কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম

কাজুবাদাম এবং কাঠবাদাম -এর দাম বেশি হওয়ায় সচরাচর কেউ খেতে চায় না। আমরা কাজুবাদাম ও কাঠবাদাম খুব অল্প পরিমাণ খেয়ে থাকি। কিন্তু এগুলো খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। বাদামে পানি এবং লবণ যুক্ত করে কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন। লবণ মেশানো পানি থেকে বাদাম আলাদা করে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খাওয়া যায়। কাজুবাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর সকালে বাদাম খেতে হবে।

শেষ কথা

অবশেষে, আমরা এই আর্টিকেল পড়ে কাঁচা ছোলা ও কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে কি হয়, কতটুকু ছোলা খাওয়া প্রয়োজন, বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কাঠবাদাম এর উপকারিতা অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আর আরো জানলাম এগুলো কখন খাওয়া উচিত।

আমি আশা করি এই আর্টিকেল পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং অন্যজন যাতে উপকৃত হতে পারে সেজন্য আর্টিকেলটি বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। আমার নতুন নতুন তথ্য পাওয়ার জন্য এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url