ওজোন স্তরের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য নিচের কোন সনদ স্বাক্ষরিত হয়?
আসসালামু আলাইকুম। আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটি একটু ভিন্ন ধরনের। ওজোন
স্তর নামটি সবাই শুনে থাকলেও, ওজোন স্তরের ব্যাখ্যা সবার কাছেই অজানা। অর্থাৎ
বিষয়টি একটু জটিল প্রকৃতির। আর এই জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা আমাদের একান্ত
প্রয়োজন।
তাই আজকে ওজোন স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে। ওজোন স্তর
ধ্বংসের কারণ সহ ওজোন স্তরের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য নিচের কোন সনদ স্বাক্ষরিত
হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। এই ওজোন স্তর সম্পর্কে জানার জন্য শেষ পর্যন্ত
সঙ্গে থাকুন।
পেজ সূচিপত্রঃওজোন স্তরের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য নিচের কোন সনদ স্বাক্ষরিত হয়
ভূমিকা
ওজোন স্তর কি সেটি জানার জন্য প্রথমত ভৌগোলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে
হবে। ওজোন স্তর এমন একটি স্তর যেটি বায়ুমণ্ডলের স্তর হিসেবে গণ্য করা হয়। ওজোন
গ্যাস নামে একটি গ্যাস এই স্তরে অবস্থান করে। এই গ্যাস অতি বিষাক্ত। যা
প্রাণীকুলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এই ওজোন স্তর বেগুনি রশ্নিকে ভূপৃষ্ঠে আসতে
বাধা দেয়। এর ফলে সূর্যের বেগুনি রশ্মি থেকে জীবজগৎ রক্ষা পায়। ব্লাড
ক্যান্সার, চোখে ছানি পড়া ইত্যাদি রোগগুলো থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে জীবকুলকে
সাহায্য করে থাকে।
এই সমস্যাগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় যেমন, শস্যের ক্ষতি করে,
গাছের পাতার বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয় ইত্যাদি। এই সকল বিষয়গুলো ছাড়াও আরো
বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় যেগুলো মানবজীবনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই সকল
সমস্যা থেকে কিভাবে সমাধান পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানার জন্য এবং ওজন স্তরের কি
কি ভূমিকা রয়েছে সেগুলো জানার জন্য আজকের এই আলোচনা।
ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ
ওজোন স্তর যেমন তৈরি হয় তেমনি ওজোন স্তরের ধ্বংস হয়। তবে এই ওজোন স্তর ধ্বংসের
বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই কারণগুলোকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমন: ১।
প্রাকৃতিক কারণ ২। অপ্রাকৃতিক কারণ
ওজোন স্তর ধ্বংসের প্রাকৃতিক কারণ গুলো হচ্ছে:
- বেগুনি রশির ক্ষতিকর প্রভাব
- বজ্রপাত
- আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া
উপরোক্ত কারণগুলো যে ওজোন গ্যাস রয়েছে সেই ওজোন গ্যাসের অনুকে ভাঙ্গার মাধ্যমে
ওজন স্তর ধ্বংস করে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এই প্রাকৃতিক কারণগুলোর
মাধ্যমেই কিন্তু ওজোন স্তর তৈরি হয়। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণ গুলোর তেমন কোন
ভূমিকা নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুনঃঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ
অপ্রাকৃতিক কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে:
- প্রথমত ক্লোরোফ্লোরো কার্বনকে ওজোন স্তর ধ্বংসের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ওজোন স্তর ধ্বংসের পেছনে নাইট্রাস অক্সাইডের বিশেষ অবদান রয়েছে। এই গ্যাসটি যানবাহন থেকে নির্গত হয়।
- কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে রয়েছে সালফারের কণা যা ওজন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী।
- জেট বিমান থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড এটিও ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- এক্ষেত্রে মিথেন ওজন স্তর ধ্বংসের জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য কোন গ্যাস দায়ী
ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য কিছু কিছু গ্যাস রয়েছে যেগুলো বিশেষভাবে কার্যকরী অবদান
রাখে। এই গ্যাস গুলো ওজন স্তরের ক্ষতিসাধন করে থাকে। ওজোন স্তর ধ্বংসকারী গ্যাস
গুলোর মধ্যে ক্লোরোফ্লোরো কার্বনকে বিশেষভাবে দায়ী করা হয়। এছাড়াও আরও বিভিন্ন
রকম গ্যাস রয়েছে যেমন: নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, মিথাইল ব্রোমাইড
মিথেন ইত্যাদি গ্যাসগুলো ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী। মানুষ সৃষ্ট এই গ্যাস
গুলো মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই আমাদের এ সকল গ্যাস সম্পর্কে সচেতন হয়ে
উঠতে হবে।
আরও পড়ুনঃস্বামী পরকীয়া করলে কি করবেন
ওজোন স্তর ধ্বংসের ক্ষতিকারক প্রভাব
ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলে যে ক্ষতিগুলো হয় সেগুলো অনেক মারাত্মক ধরনের হয়ে থাকে।
এর ফলে অনেক বড় বড় রোগ হয় এবং পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই চলুন
সংক্ষেপে জেনে নিই ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলে যে ক্ষতিকর প্রভাব গুলো পড়তে পারে সেই
সম্পর্কে।ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলে সূর্যের বেগুনি রশ্নি জীবজগতে প্রভাব ফেলে।
এই রশ্নি এতটাই ক্ষতিকর যে, এটি মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য দায়ী। ত্বকের
ক্যান্সার থেকে শুরু করে চোখে ছানি পড়া, চর্মরোগ, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়, রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ইত্যাদি সহ আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যদি
ওজোন স্তর ১০% ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তাহলে ক্যান্সারের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
এই বেগুনি রশ্মি উদ্ভিদের ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। এর ফলে উদ্ভিদের বীজ, ফুল
এগুলোর বৃদ্ধি অনেকাংশে কমে যায়। সাথে সাথে উৎপাদনের পরিমাণও অনেক হ্রাস পাবে।
ওজোন স্তর ধ্বংস হলে বরফ গলতে থাকবে। মাছ যে ফাইটোপ্লাংকটন প্রক্রিয়ায় খাদ্য
তৈরি করত তা অনেকাংশে হ্রাস পাব।
ওজোন স্তর ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়
আমরা উপরের আলোচনা মাধ্যমে জানতে পারলাম, ওজন স্তর ধ্বংসের ফলে কি কি ক্ষতি হতে
পারে। এবং এই ক্ষতির প্রভাব অনেক মারাত্মক হয়। তাই আমাদের উচিত এই ওজোন স্তরকে
কিভাবে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যায় সেই পদক্ষেপগুলো গ্রহন করা। তাহলে চলুন
জেনে নিই ওজোন স্তর ক্ষয় প্রতিরোধের উপায় গুলো কি কি। উপরের আলোচনায় বলা
হয়েছে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথাইল ইত্যাদি এর গ্যাস সমূহ
ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী।
আরও পড়ুনঃচুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়
তাই ওজোন স্তর রক্ষা করার জন্য এই গ্যাস গুলোর ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। সি এফ সি
কার্বন যাতে নির্গত না হয় সেজন্য রেফ্রিজারেটর বা এসি গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে
হবে। আমরা যে রুম স্প্রে গুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলেও কিন্তু ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
তাই রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এমন অনেক গ্যাস
রয়েছে যেগুলো যানবাহনের ধোঁয়া থেকে নির্গত হয় এবং ওজোন স্তর ধ্বংস করে। এমন
যানবাহন ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। তাই উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন না হলে
অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
ওজোন স্তরের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য নিচের কোন সনদ স্বাক্ষরিত হয়
ওজোন স্তর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করা হয় ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য যে গ্যাস গুলো দায়ী
সেগুলোর বিরুদ্ধে। আর এগুলো গৃহীত হয় ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভিয়েনা
কনভেনশনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ঘোষণা করা হয়, ১৬ সেপ্টেম্বর
আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস।
ওজোন স্তর সৃষ্টির কারণ
ওজোন স্তর সৃষ্টির পিছনে কিছু গ্যাস রয়েছে যেগুলোর ক্রিয়া বিক্রিয়ার মাধ্যমে
ওজোন স্তর সৃষ্টি হয়। অক্সিজেন পরমাণু এর সাথে অক্সিজেন অণুর বিক্রিয়ার মাধ্যমে
গঠিত হয় ওজোন অনু। এর ফলে তৈরি হয় ওজন স্তর। এই ওজোন স্তর রক্ষা করার জন্য
সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু তাই নয় এই ওজোন স্তর যদি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তাহলে
বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
ওজোন স্তর কে আবিষ্কার করেন
আশা করি ওজোন স্তর সম্পর্কে অনেক ধারণা পেয়ে গেছেন।স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর নিচে এর
অবস্থান। ওজোন স্তর কিভাবে সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কে জেনেছি। এখন জানতে হবে ওজোন
স্তর কিভাবে আসলো বা কে আবিষ্কার করল। ১৯৩০ সালে চার্লস ফ্যাব্রি এবং হেনরি বুইসন
ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন।
শেষ কথা
অবশেষে, উপরোক্ত আর্টিকেলে ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হলে কি কি ক্ষতি হতে পারে এবং
এই ওজোন স্তর রক্ষা করা কতটা প্রয়োজন সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আরো
জানলাম ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য কোন কোন গ্যাস দায়ী এবং এই স্তর রক্ষা করতে কি কি
করা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে।
তাই আশা করি ওজোন স্তর সম্পর্কে সকল বিষয়গুলো জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। আমার
কষ্ট তখনই সার্থক হবে, যখন আপনার শেয়ারের মাধ্যমে অন্যজন উপকৃত হবে। এজন্য বেশি
বেশি শেয়ার করে দিন এবং নতুন নতুন তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ