নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়-কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়



আসসালামু আলাইকুম। আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটি অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। উপাদানটি হচ্ছে নিম পাতা। আমরা সকলেই নিম গাছের সাথে পরিচিত। নিম গাছ গ্রাম অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। কিন্তু শহরের লোকজন থেকে শুরু করে গ্রামের লোকজন সকলেই এই নিম গাছ চিনে থাকে।
নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
কিন্তু আসল কথা হচ্ছে নিম গাছের পাতার ব্যবহার সম্পর্কে কতজন জানে। আসলে নিম গাছের সকল অংশ ঔষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই চলুন জেনে নিই নিম গাছের নিমপাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে। এর সাথে আরও আলোচনা করব কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়।

পেজ সূচিপত্রঃ নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়-কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়

ভূমিকা

নিম গাছ এমন একটি গাছ ,যে গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। নিম গাছের বাকল থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত, এমনকি নিম গাছের পাতা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় চুলকানি, চর্ম রোগ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তখন এই সকল রোগের চিকিৎসায় নিম গাছের পাতা ব্যাপক ব্যবহার হয়। এটি যেমন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ঠিক তেমনি নিমপাতা রূপচর্চায় ব্যবহার করা হয়।

নিমপাতা মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করতে ব্যবহার করা হয়। ফর্সা হওয়ার ক্ষেত্রে নিমপাতা বেশ উপকারী একটি উপাদান। কিন্তু নিমপাতা দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায় সেই উপায়গুলো সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। তাই আজকে এই বিষয়গুলো নিয়ে পুরোপুরি আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

আমরা জানি নিমপাতা বেশ উপকারী একটি উপাদান। নিমপাতা বিভিন্ন রোগ দূর করার সাথে সাথে ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করে থাকে। ব্রণের দাগ, কালচে দাগ দূর হয় নিমপাতা ব্যবহারের মাধ্যমে। তবে নিমপাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-
নিম পাতা ও অ্যালোভেরাঃ এই প্যাকটি তৈরি করতে আমাদের প্রয়োজন হবে ১ চামচ পরিমাণ পাতার গুঁড়ো ও অ্যালোভেরা জেল লাগবে ২ চামচ পরিমাণ। তাহলে প্যাকটি তৈরি হয়ে যাবে। এই প্যাকটি মুখে ব্যবহার করলে বিভিন্ন দাগ সহ ব্রণের দাগ দূর হয়ে মুখ উজ্জ্বল হবে।
টক দই ও নিম পাতার ফেসপ্যাকঃ টক দই আর নিম পাতার পাউডার নিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে ফেলুন এবং সেটি মুখে ব্যবহার করলে ব্রণের দাগ ভালো হয়ে যায়।
নিমপাতা ও গোলাপজলঃ নিম পাতা ও গোলাপজল মিশ্রণ করলে একটি প্যাক তৈরি হবে। প্যাকটি মুখে দেওয়ার পর 30 থেকে 40 মিনিট রেখে পরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। পরবর্তীতে দেখবেন ত্বকের দাগ সহ ব্রণের দাগ চলে গেছে।
নিম পাতা ও তুলসীঃ নিম পাতা ও তুলসির সমন্বয়ে তৈরি প্যাকটি ব্রণ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

আমরা সকলেই ফর্সা হতে চাই। আমরা ফর্সা হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করি। অনেকে রয়েছে যারা ফর্সা হওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু ঘরোয়া ভাবে এই নিমপাতা ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া যায়। এর জন্য নিম পাতার গুড়োর সাথে যদি জলপাই তেল ব্যবহার করা হয় তাহলে একটি মিশ্রণ তৈরি হবে। এবার মিশ্রণটি মুখে দেওয়ার পর কিছু সময় ধরে রেখে দিন। পরবর্তীতে পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। তাহলে ত্বক অনেক মসৃণ হবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

নিম গাছের নাম আমরা সবাই শুনেছি। এই নিম গাছ প্রায় বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়। নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা আছে। নিম গাছকে ঔষধি কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই গাছের শিকড়, গাছের বাকল এমনকি পাতা পর্যন্ত বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়। প্রায় লোকের এলার্জির সমস্যা রয়েছে। চুলকানোর ফলে এগুলো লাল লাল হয়ে যায় এবং ফুলে যায়। তখন আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকি। কিন্তু ওষুধ গ্রহণের ফলে এটি স্থায়ীভাবে ভালো হয় না। এক্ষেত্রে নিম পাতা ব্যবহার করলে এলার্জি রোগকে চির বিদায় দেওয়া সম্ভব।
তার জন্য প্রথমে নিম পাতা রোদে শুকিয়ে সেগুলো গুড়ো করে নিতে হবে। তারপর ১/৩ অংশ পাতার গুঁড়া ও ভুষি নিতে হবে ১চামচ। এবার পুরো এক গ্লাস পানি নিয়ে তাতে এই দুটি উপাদান দিয়ে দিতে হবে। এই মিশ্রণটি অন্তত ৩০ মিনিট রাখুন। তারপর মিশ্রণটি ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে, দুপুরে খাওয়ার পর কিংবা রাতে ঘুমানোর পূর্বে খেতে পারেন। এভাবে যদি ২০ থেকে ২৫ দিন প্রতিনিয়ত খাওয়া যায় তাহলে এলার্জির ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও নিম পাতা পানির সাথে গরম করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে সেক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

চুলকানি একবার শুরু হলে সেটি সহ্য করা অনেকের কষ্টদায়ক হয়ে যায়। তাই এই চুলকানি থামানোর জন্য আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। এক্ষেত্রে নিমপাতা বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। চুলকানিতে নিমপাতা ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পানিতে নিমপাতা দিয়ে সেটি সিদ্ধ করার পর ব্যবহার করলে পচড়া দূর হয়ে যায়। এছাড়াও পাতা পাটাতে পিষে ক্ষতস্থানে দিলে চুলকানি থেকে উপশম পাওয়া যায়। আবার পাতা গুড়ার সাথে সামান্য পরিমাণ সরিষার তেল দিয়ে ব্যবহার করলে চুলকানির ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাই যখন চুলকানির সমস্যা দেখা দিবে, তখন উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে চুলকানি সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

একটি জিনিসের ভালো এবং মন্দ দুটোই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু যে ভালো থাকবে এরকম না আবার শুধু যে খারাপ দিক থাকবে এটাও না। তাই এই আলোচনায় নিমপাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটো নিয়ে আলোচনা করব।
উপকারিতা সমূহঃ
  • আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক ধরণের পোকামাকড় থাকে। তাই নিম পাতা পোড়ালে এই পোকামাকড় তাড়ানো সম্ভব। এমনকি মশা তাড়াতে অধিক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • নিম পাতার চা খেলে শরীরের জ্বর অনেকাংশে কমে যায়। কিন্তু ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
  • দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
  • ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ বা ব্রণ দূর করতে নিম পাতা বেশ কার্যকরী।
  • চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলকে লম্বা করতে সাহায্য করে এই নিম পাতা।
  • ডায়াবেটিসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে নিম পাতার রস অনেক উপকারী উপাদান।
  • নিম পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • দেহের রক্ত পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অপকারিতা সমূহঃ

  • নিম পাতার একটি অপকারিতা হচ্ছে রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের এটি না খাওয়াই ভালো।
  • নিম পাতা ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি সমস্যা গুলো তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
  • গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে এটি খেল।
  • কিডনির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে এই নিমপাতা।

গায়ের রং ফর্সা হওয়ার উপায়

সবাই ফর্সা হতে চাই। ফর্সা হওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ফর্সাকারি ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। এগুলো ব্যবহার করে ফর্সা হলে সেটা হয় ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু ত্বকের উপর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়া যায় এবং এতে ত্বকের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে গায়ের রং ফর্সা করা যায় এই সম্পর্কে জেনে নিব।
  • দুধ দিয়ে গোসল করা ফর্সা হওয়ার জন্য কার্যকরী পদ্ধতি।
  • লেবু এবং মধু একসঙ্গে মিশ্রণ করে ব্যবহার করলে ত্বক অনেক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
  • ফর্সা হওয়ার জন্য ডিমের কুসুম অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। এক্ষেত্রে কুসুম ভালোভাবে ফেটে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।
  • ফর্সা হওয়ার জন্য একটি কার্যকরী উপাদান হচ্ছে টক দই। এক্ষেত্রে অনেকের ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে। সেজন্য দইয়ের সাথে অল্প পরিমাণ মধু দিয়ে ব্যবহার করুন। তাহলে ত্বক অনেক লাবণ্য হয়ে উঠবে।
  • টমেটো এবং মধুর মিশ্রণ ত্বককে মসৃণ করে তুলতে সাহায্য করে।
  • গায়ের রং ফর্সা করার ক্ষেত্রে পেঁপে এবং মধু এই দুটোর মিশ্রণ ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। এটি ব্যবহারে ত্বকের কালো দাগ গুলো দূর হয় এবং ত্বক অনেক সুন্দর হয়।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ডাবের পানির ভূমিকা অনেক।

কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়

কাল থেকে ফর্সা হওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এই উপায় গুলো ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া যায়। আলুর রস ফর্সা হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। ত্বকে আলুর রস ব্যবহার করলে মুখের মেছতার দাগসহ বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ, ব্রণের দাগ ইত্যাদি দূর হয়। এবং ত্বক অনেক ফর্সা হয়। এছাড়া ফর্সা হওয়ার জন্য বেসন ব্যবহার হয়। এর সাথে গোলাপজল, হলুদের গুঁড়ো এবং দুধ এই তিনটি একসঙ্গে যুক্ত করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। তারপর এটি মুখে ব্যবহার করুন। তাহলে আপনার ত্বক অনেক উজ্জ্বল হবে।

 কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়

এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে গায়ের রং ফর্সা করতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলো গায়ের রং ফর্সা করার পাশাপাশি শরীরে অনেক পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
  • গ্রিন টি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়। এটি খেলে ত্বকে কোন প্রকার কালো দাগ পড়তে পারেনা এবং ত্বক সুন্দর হয়।
  • যে ফলগুলো টক জাতীয় সেগুলো ত্বককে ভালো রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে। টক ফল গুলোতে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড দুটোই বিদ্যমান থাকাই ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ত্বককে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে কলা অনেক উপকারী। কারণ কলাতে ভিটামিন A,B,E রয়েছে। চেহারার মধ্যে যে বয়সের ছাপ পড়ে, তা নিয়ন্ত্রণ করে এই কলা।
  • ত্বককে উজ্জ্বল বা ফর্সা করার জন্য পাকা পেঁপে খেতে পারেন

কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়

শেষ কথা

পরিশেষে নিম গাছ সম্পর্কে বলতে গেলে উপরের বিষয়গুলো বারবার চলে আসে। আর আমরা উপরের আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারলাম নিম গাছের যে সকল গুনাগুন রয়েছে সে সম্পর্কে এবং নিম গাছের পাতার ব্যবহারও জানলাম। আলোচনার প্রধান বিষয় নিমপাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় কি কি এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি এবং এর উপায় গুলো কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে এটাও জেনেছি। তাই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url