আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত



আসসালামু আলাইকুম। আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে আমলকি নিয়ে। অর্থাৎ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আমলকির গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আশা করি নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে আপনি আমলকি সম্পর্কে সকল তথ্য বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমলকির গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমলকির শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। তাই চলুন জেনে নিই আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আমলকি কি কি কাজে ব্যবহার করা যায় ইত্যাদি সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

ভূমিকা

আমলকি খেলে যে সকল উপকার গুলো পাওয়া যায় সে সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। আমলকি দেহের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। আমলকি খেলে দেহের অনেক রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। অর্থাৎ আমলকি ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। আমলকিতে ভিটামিন সি যে পরিমাণ রয়েছে, অন্যান্য ফলে এর চেয়ে অনেক কম। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বেশ কার্যকরী একটি ফল। এটি হাঁপানি থেকে শুরু করে কোলেস্টেরল কমানো এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও অনেক কার্যকরী উপাদান। যদি আপনি প্রতিদিন একটি করে আমলকি খেতে পারেন তাহলে ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। আমলকি আপনি কাঁচাও খেতে পারেন, এমনকি এটি আচার করেও খাওয়া যায়। নিম্নের আলোচনায় যদি আপনি আমলকির উপকারিতা গুলো জানেন, তাহলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা আমলকি আমরা অনেকেই খেয়ে থাকি আবার অনেকেই খেতে পছন্দ করে না। কিন্তু এই কাঁচা আমলকির মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান রয়েছে। যা অনেক রোগের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। শুধু উপকারিতা নয়, আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তাই চলুন এ পর্যায়ে জেনে নিই কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি।
  1. হজম শক্তি বাড়াতে আমলকি সাহায্য করে।
  2. ফুসফুস ভালো রাখতে আমলকি বেশ উপকার।
  3. খুশকি দূর করতে আমলকি অনেক কার্যকরী একটি ফল।
  4. আমলকি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
  5. বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব পূরণে সাহায্য করে।
  6. আমলকিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করে।
  7. এজমার সমস্যা থাকলেও আমলকির জু স খুবই কার্যকরী
  8. রক্তের পরিষ্কারক হিসেবে আমলকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  9. পেটের পিড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়।
  10. শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর জন্য আমলকির অবদান অনেক।
  11. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও আমলকি বেশি উপকারী ফল।
  12. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমলকি খেতে পারেন।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা

আমলকি শুধু ঔষুধ হিসেবে কিংবা ত্বকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এমন নয়, এটি চুলের যত্নেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চুল পড়া বন্ধ রোধ করে এবং চুল পাকাও রোধ করে এই আমলকি। নিম্নে কিছু উপকারিতা গুলো দেখে নিন।
  1. আমলকির রস মাথায় ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায়।
  2. আমলকিতে ভিটামিন ই থাকায় এটি কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
  3. আমলকির গুঁড়া চুলে ব্যবহার করলে চুল অনেক লম্বা হয় এবং মসৃণ হয়ে ওঠে।
  4. যদি চুলে খুশকি থাকে, তাহলে খুশকি দূর করার জন্য আমলকি উপকারী।
  5. আমলকি ব্যবহার করলে চুল অনেক ঝলমলে হয়ে ওঠ।
  6. চুল ঘন করার জন্য আমলকি বেশ উপকারী।
  7. মেহেদির সাথে যদি আমলকির গুড়া ব্যবহার করা হয় তাহলে চুলের কালার সুন্দর দেখায়।
চুলে আমলকি ব্যবহার করার ফলে এই সকল উপকারিতা গুলোর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের উপকার রয়েছে, যা আমরা আমলকি ব্যবহার করার মাধ্যমে পেতে পারি।
চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা

নতুন চুল গজাতে আমলকি

আমলকি শুধু চুল পড়া বন্ধ করেনা, চুল গজানোর ক্ষেত্রেও কার্যকরী। চুলের যে সকল সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো সমাধান করতে আমলকি বেশ কার্যকরী। চুলের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন। বিশেষ করে ভিটামিন সি চুলের জন্য অনেক প্রয়োজন। এই ভিটামিন সি পেতে পারি আমলকি খাওয়ার মাধ্যমে। আমলকির রস চুলে দিলে চুল বৃদ্ধি পায়, ঘন হয় এমনকি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই চুলের উপরোক্ত সুবিধা গুলো পেতে আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

চুলের যত্নে আমলকি ও মেথি

চুলের যত্নে আমলকি সকল উপকার করে থাকে সেগুলো আমরা উপরের আলোচনায় জেনেছি। চুলকে সুন্দর করতে কিংবা ঘন করে তুলতে আমলকির অবদান অনেক। আমলকির রস খুশকি দূর করতে যেমন কর্যকরী, ঠিক তেমনি চুল পড়া রোধ করতে অনেক কার্যকরী। তাই বলা যায়,চুলের যত্নে আমলকির গুরুত্ব অপরিসীম।

অপরদিকে, চুলের যত্নে মেথির গুরুত্ব কম নয়। চুলকে সুন্দর করে তুলতে মেথির গুরুত্ব অনেক। মেথিতে প্রোটিন এবং আয়রন রয়েছে যা চুলকে অনেক শক্তিশালী করে তোলে। এক্ষেত্রে মেথির মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে। মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বেটে মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। তারপর এই মিশ্রণটি তুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া রোধ সহ আরো সমস্যা দূর হবে।

আমলকি এবং মেথি একসঙ্গে ব্যবহার করে চুলকে সুন্দর করে তুলতে পারেন। আমলকির গুড়া এবং মেথির গুড়া একসঙ্গে করে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটি পরের দিন চুলে ব্যবহার করলে চুল অনেক সুন্দর এবং মসৃণ হবে।

চুলে আমলকির ব্যবহারের নিয়ম

এবার চলুন জানা যাক, আমলকি কিভাবে চুলে ব্যবহার করতে হবে সেই নিয়ম সম্পর্কে। আমরা জানি আমলকি চুলের যত্নে খুব উপকারী একটি ফল। চুলের বিভিন্ন রকম উপকার করে থাকে যেমন চুল পড়া বন্ধ করে, চুল ঘন করে, চুল গজাতে সাহায্য করে ইত্যাদি। কিন্তু আমরা কি জানি, আমলকি কিভাবে চুলে ব্যবহার করতে হয়? যদি জানা না থাকে, তাহলে আজকে জেনে নিন কিভাবে ব্যবহার করতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রথমে আমলকির মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণের সাথে কিছু পরিমাণ লেবুর রস যোগ করতে হবে। তারপর সেটি চুলে ২০-২৫ মিঃ রেখে দিন। পরে হালকা গরম পানির সাহায্যে চুল পরিষ্কার করে নিন। তাহলে চুল অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে শুধু আমলকির রসও ব্যবহার করা যায়। শুধু রস ব্যবহার করলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

আমলকির ঔষধি গুন

আমলকি শুধু ত্বকের উপকারিতা ছাড়াও বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ এমন কিছু রোগ আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে আমলকি খেলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। যেমন:
  1. কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ সারাতে আমলকি বেশ কার্যকরী। যদি বদহজমের সমস্যা থাকে সেটাও দূর করে এই আমলকি। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে আমলকি অধিক কার্যকরী।
  2. চোখের জ্যোতি বাড়াতে আমলকির রস খুব উপকারী।
  3. অনিদ্রা ,ব্যথার উপশমে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
উপরোক্ত রোগগুলোর ক্ষেত্রে আমলকি মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়াও আরো রোগের উপশমে আমলকি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আমলকির ঔষধি গুন

আমলকির ক্ষতিকর দিক

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তবে এর অপকারিতার চাইতে উপকারিতা অনেক বেশি। আমলকি খাওয়ার ফলে যে ক্ষতি হয়, সেটার প্রভাব অনেক কম। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
  1. যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  2. অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার ফলে এলার্জিসহ ডায়রিয়াও হতে পারে।
  3. যাদের সার্জারি করা রয়েছে তাদের আমলকি খাওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।
  4. গর্ভবতী মহিলাদের আমলকি খাওয়া উচিত হবে না। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

আমলকি খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। কিন্তু অতিরিক্ত আমলকি ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আমলকি খেতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রতি সকালে ১-২ আমলকি খাওয়া উচিত। এর বেশি খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা আমলকি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাব। যাতে করে কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হতে হয়।

আমলকি কিভাবে খেতে হয়

আমলকি খাওয়ার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যে পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে আমলকি খেলে, অনেক উপকার পাওয়া যায়। আমলকি খাবার সঠিক সময় হচ্ছে সকাল বেলা। আমলকি কাঁচা অথবা জুস করেও খাওয়া যায়। আমলকি খাওয়ার ফলে বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগ গুলো ভালো হয়। আমলকি আচার করে খেতে পারেন। অনেকেই কাঁচা অবস্থায় আমলকি লবণ দিয়ে খেয়ে থাকে। আমলকি আরও বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। যেমন আমলকি শুকিয়ে পাউডার করে, সেটি সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়।

শেষ কথা

আমলকি অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় এর উপকারিতা অনেক রয়েছে। আমলকি খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন পুষ্টির অভাব অথবা ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়। এবং বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে। আশা করি আমলকি কি কি পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ, আমলকি চুলের বা ত্বকের জন্য কতটা উপকার এবং আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কতটুকু রয়েছে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

তাই উপরের পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিন। এবং নতুন নতুন তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url