মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কোন জাতীয় সার ব্যবহার করা উচিত


আসসালামু আলাইকুম। মাটির উর্বরতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় এটাই হচ্ছে এ আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়। উর্বর মাটিতে ফসল ভালো হয় এটা সবাই জানে। কিন্তু অনেকেই জানে না কিভাবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়। আবার সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করার নিয়ম কানুন অনেকের অজানা।
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কোন জাতীয় সার ব্যবহার করা উচিত
তাই মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কোন জাতীয় সার ব্যবহার করা উচিত এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে। তাই চলুন জেনে নিন মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কোন জাতীয় সার ব্যবহার করা উচিত

ভূমিকা

উর্বর মাটি ভালো ফলন হওয়ার জন্য খুবই উপকারী। আর উর্বর মাটি ছাড়া ভালো ফলন আশা করা যায় না। তাই সর্বপ্রথম মাটিকে উর্বর করে তুলতে হবে। কিন্তু এই মাটিকে উর্বর করে তোলার জন্য কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়। যেমন সার কি পরিমান ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। উর্বর মাটি হচ্ছে সেই মাটি যা সঠিকভাবে বা পরিমাণ ভাবে পুষ্টি সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে। আর এই উর্বর মাটি তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সার এবং বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

আর এই মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য অনুজীবের ভূমিকাও অনেক রয়েছে। এছাড়াও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কম্পোস্ট সার, গোবর ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জৈব পদার্থ ব্যবহার করেও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়। আরো বিভিন্ন উপায় রয়েছে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য। তাই সকল পদ্ধতি গুলো জানার জন্য আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

টবের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির উপায়

প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো টবের মাটির উর্বরতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেই সম্পর্কে। অনেককেই দেখা যায় শখের বশে টবে গাছ লাগিয়ে ছোট্ট বাগান তৈরি করে তুলতে। কিন্তু এই টবে গাছ লাগানোর জন্য প্রথমে প্রয়োজন হবে মাটি। অর্থাৎ টবে গাছ লাগানোর জন্য প্রয়োজন উর্বর মাটি। কিন্তু এই মাটিকে উর্বর করে তোলায় হচ্ছে প্রধান কাজ। তাই মাটিকে উর্বর করার আগে প্রধান কাজ হচ্ছে মাটি পরীক্ষা করা। অর্থাৎ মাটির গুনাগুন সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা।
তাই টবের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য প্রথমে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এটি পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। টবের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা। টবের মাটির সাথে এই সার ব্যবহার করলে টবের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। আর টবে যদি আগাছা জন্মে সেটি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া আগাছা গুলো পুষ্টি শোষণ করে নিবে।

তাই আগাছা যেন না জন্মে সেই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। তারপর টবে যেন অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে সেই দিকেও দৃষ্টিপাত করতে হবে। কেননা পানি জমে থাকলে গাছের গোড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। সুতরাং উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে টবের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারেন।

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

উর্বর মাটি ভালো ফলন পাওয়ার প্রধান শর্ত। অর্থাৎ অধিক ফলন পাওয়ার জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে। অনূর্বর মাটিতে অধিক ফলন আশা করা যায় না। তাই মাটিকে উর্বর করে তুলতে হবে। আর এই মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন খুবই কার্যকরী। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জৈব পদার্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জৈব পদার্থ গুলোর মধ্যে গোবর, কম্পোস্ট সার ইত্যাদি ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়। এটি যেমন মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে তেমনি মাটির পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

এক্ষেত্রে একই ফসল বারবার না লাগিয়ে ফসলের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত। আবার বিভিন্ন ধরনের জৈব সার যেমন ফসফেট, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদান গুলো ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাই মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ উর্বর মাটি ছাড়া কোন শস্যের ভালো ফলন হতে পারে না।

মাটির উর্বরতা বজায় রাখার উপায় কি কি

শুধু মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির পর সবচেয়ে বড় বা কঠিন কাজ হচ্ছে সেই উর্বরতা ধরে রাখা। আর এই উর্বরতা ধরে রাখতে না পারলে মাটির গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আর এই উর্বরতা হারিয়ে গেলে ভালো ফলন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তাই মাটির উর্বরতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেই যত্ন এবং সার উভয়ই প্রয়োজন। কিছু অকেজো জৈব পদার্থ রয়েছে যেগুলো পচনের মাধ্যমে উর্বরতার প্রক্রিয়া ধরে রাখা যায়।
মাটির উর্বরতা বজায় রাখার আরো একটি পদ্ধতি হচ্ছে মাটির যে ক্ষয় হয় সেটি প্রতিরোধ করতে হবে। কারণ মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে উর্বরতা হারিয়ে যায়। তাই মাটি যেন আলো, বাতাস সুষ্ঠুভাবে পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে মাটির উর্বরতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে সার ব্যবহারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক কিছু উপায় ব্যবহার করা উচিত। যেমন গোবর, জৈব সার, ছাই ইত্যাদি। তাই মাটির উর্বরতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় কেন

প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে। বর্তমানে মাটির উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আর মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। আর আমাদের উচিত সেই কারণগুলো সম্পর্কে জানা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আর খাদ্যের চাহিদা মিটানোর জন্য একই জমিতে বছরে ২-৩ বার চাষাবাদ করা হচ্ছে। যার ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

তাছাড়াও মাটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার আরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন: ব্যাপক পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার, দূষণ, শিল্পায়ন ইত্যাদি। এই সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই মাটির উর্বরতা শক্তি ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কোন মাটি বেশি উর্বর

মাটির গুনাগুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আবার এটাও জানা নেই যে কোন মাটি উর্বর বেশি। সাধারণভাবে দোআঁশ মাটিকে উর্বর মাটি বলা হয়ে থাকে। এই মাটির উর্বরতা অনেক বেশি এবং এই মাটিতে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আরো যে অন্যান্য মাটি রয়েছে যেমন এঁটেল মাটি, বেলে মাটি এগুলোর উর্বরতা একটু কম। এঁটেল মাটিতে বাতাসের পরিমাণ অল্প পরিমাণে রয়েছে। অপরপক্ষে বেলে মাটিতেও পুষ্টির পরিমাণ কম রয়েছে। আর দোআঁশ মাটিতে পুষ্টির পরিমাণ বেশি এবং পানির ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় এটির উর্বরতা বেশি।

কোন মাটিতে ফসল ভালো হয়

আমরা জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলায়। কোন ফসলের উৎপাদন বেশি হয় আবার কোন ফসলের উৎপাদন কম হয়। এটি সাধারণত নির্ভর করে মাটির উর্বরতার উপর। মাটি যদি উর্বর হয় তাহলে ফলন বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য প্রথমে মাটি নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে উর্বর মাটি বেছে নিতে হবে। ফসল ভালো হবার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মাটি হচ্ছে দোআঁশ মাটি। এই মাটির পুষ্টি গুনাগুণ অনেক ভালো এবং পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। জৈব পদার্থের পরিমাণও অনেক থাকায় এই মাটির উর্বরতা অনেক বেশি। এই দোআঁশ মাটি সব ফসলের জন্য উপযুক্ত।

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অনুজীবের ভূমিকা

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অনুজীবের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এরা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। অনুজীব গুলো সাধারণত ছত্রাক, শৈবাল শ্রেণীর হয়ে থাকে। মাটিতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। খনিজ তৈরিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই অনুজীব। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি সরবরাহে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অনুজীবের ভূমিকা কতটুকু রয়েছে।

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

পরিশেষে, ভালো ফলন পাওয়ার জন্য উর্বর মাটি কতটা প্রয়োজন তা আমরা উপরের আলোচনা মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম। আর মাটি যদি উর্বর হয় তাহলে সব ফসল ভালো উৎপাদন হয়। আমরা আরো জানলাম মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কোন জাতীয় সার ব্যবহার করা উচিত এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, কি পরিমান ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। 

তাই আশা করি উপরের আলোচনা মাধ্যমে মাটি উর্বর করার জন্য কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন। আর আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে তবে অবশ্যই শেয়ার করে দিন। ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url