জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয়




জ্বর ও মাথা ব্যাথা বিষয়টা সবার কাছেই পরিচিত। আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এটি হল জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি। প্রায়ই মানুষের জ্বর ও মাথাব্যথা হয়ে থাকে। আবহাওয়া পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা উঠানামা হয়। যার ফলে জ্বর ও মাথা ব্যথার মত অসুখ বেশি দেখা দেয়। তখন সবাই ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি।
জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয়
তাই জ্বর ও মাথাব্যথা হলে ঘরোয়া কিছু উপায় বা পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলো প্রয়োগ করলে সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব। আমরা ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর ও মাথা ব্যথা দূর করা যায় এবং জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি সে বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

পেজ সূচিপত্রঃ জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয়

ভূমিকা

জ্বর আসলে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। অন্যান্য কারণে জ্বর হতে পারে। জ্বর হওয়ার সাথে সাথে অনেকের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তাহলে জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি আপনি কি তা জানেন? আশা করি আজকে জেনে যাবেন। এই গরমে আমাদের শরীর প্রচুর ঘেমে যাই। শরীরে এই ঘাম বসে জ্বর আসতে পারে। জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন কোন কাজে আর মন বসে না।

সময় মতো খাবার না খাওয়া এবং স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন না করা ইত্যাদি কারণে অনেক সময় জ্বর ও মাথাব্যথা সমস্যা দেখা দেয়। তখন আমরা ওষুধ খাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। তবে মাথা ব্যাথার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। কোন কোন মাথা ব্যথা জ্বরের কারণে হয়ে থাকে আবার কোন কোন মাথাব্যথা কোন উপসর্গ ছাড়াই শুরু হয়ে যায়। তাই এগুলো থেকে বাঁচতে আমাদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বার বার জ্বর আসার কারণ

জ্বর বারবার আসার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শরীর যদি বারবার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় ক্ষেত্রেও একাধিকবার জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে। আবার যদি জ্বর বারবার আসে তাহলে বুঝতে হবে শরীরের মধ্যে বা দেহের মধ্যে জটিল রোগ রয়েছে। তবে বারবার জ্বর আসার আরো কিছু কারণ রয়েছে যেমন:
  • ফুসফুসে যদি পানি জমে থাকে তাহলে বারবার জ্বর আসে। যক্ষা নিউমোনিয়া ইত্যাদির কারণে ফুসফুসে পানি জমে।
  • বারবার জ্বর আসার আরেকটা কারণ হচ্ছে নিউমোনিয়া রোগ। কারণ যদি আমাদের নিউমোনিয়া হয় তখন আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। তাই আর চিকিৎসকের পরামর্শ নিই না। তখন সেটা শরীরের মধ্যে রয়ে যায়। যার ফলে জ্বর বারবার আসে।
  • যদি কোন শিশু বা ব্যক্তি ব্রংকাইটিস এ আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে বারবার জ্বর আসতে পারে।
  • মূত্র তন্ত্রে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে প্রস্রাবে সমস্যার সৃষ্টি হয় যার ফলে বারবার জ্বর আসে।
  • ক্যান্সারের কারণেও বারবার জ্বর আসতে পারে।
  • শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বেধে থাকলে সেক্ষেত্রে বারবার জ্বর আসে। বিভিন্ন রোগ যেমন- কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি।
জ্বর

বার বার জ্বর হলে করণীয়

আমাদের শরীরে ঘন ঘন জ্বর হয়। জ্বর হওয়ার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং তখন কোন কাজ করা যায় না। এই জ্বর হলে কছু করনীয় রয়েছে যেমন।
  • যদি জ্বর হয় তবে পরিশ্রম না করে বিশ্রাম নিন। অর্থাৎ পরিশ্রমের কোন কাজ করা যাবে না।
  • জ্বর হলে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যদি বুঝতে পারেন যে জ্বর আসছে তাহলে পানি পান করুন।
  • গরম স্যুপ খেতে পারেন। জ্বরের সময় আদা চা খেলে অনেকটা মাথা ব্যথা কমে যায়।
  • জ্বর হলে হালকা গরম পানিতে গোসল করা উচিত। গোসল করার ফলে দেহের তাপমাত্রা অনেকাংশে কমে যায়।
  • জ্বর হলে আরেকটি কাজ হচ্ছে গা মুছা। তবে গা মোছাটা হালকা গরম পানি দিয়ে করতে হবে।
  • জ্বর হলে তাপমাত্রা কমানোর জন্য জলপট্টির ব্যবহার আদিকাল ধরে চলে আসছে। জ্বরের তাপমাত্রা অধিক বেড়ে গেলে তখন এটি ব্যবহার করা হয়।
  • জ্বরের সময় পাতলা সুতি কাপড় পড়ুন। কেননা পাতলা কাপড় পরলে দেহের মধ্যে বাতাস অনায়াসে ঢুকতে পারে।

বাচ্চাদের বার বার জ্বর আসার কারণ

বাচ্চাদের জ্বর বিভিন্ন কারণে আসতে পারে। অনেক বাচ্চা রয়েছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। কিন্তু যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হন। অনেক শিশু রয়েছে যারা প্রায়ই সর্দি বা কাশি জনিত সমস্যাই ভুগে থাকেন। সেক্ষেত্রে তারা জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া যক্ষা, ম্যালেরিয়ার মত রোগের কারণেও জ্বর আসতে পারে। যে সকল বাচ্চার জন্মের সময় মূত্র তন্ত্রের সমস্যা থাকে তাদের প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে জ্বর আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই উপরোক্ত বিষয়টুকু পড়ে বুঝতে পারলাম বাচ্চাদের বারবার জ্বর আসার কারণ কি বা কি হতে পারে।

ঘন ঘন জ্বর কিসের লক্ষণ

ঘন ঘন জ্বর আসলে বুঝতে হবে এটি ভালো লক্ষণ নয়। নিম্নোক্ত লক্ষণগুলোও এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা যায়। যেমন
  • ঘন ঘন জ্বর হলে বুঝতে হবে টাইফয়েড অথবা নিউমোনিয়ার মত রোগ হতে পারে।
  • যদি মূত্র তন্ত্রের সমস্যা থাকে এক্ষেত্রেও জ্বর আসে। অর্থাৎ ঘন ঘন জ্বর হলে এটাও বোঝা যায় যে মূত্র তন্ত্রের সমস্যা থাকতে পারে।
  • যারা ক্যান্সার বা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদেরও জ্বর আসে।

মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ

মাথাব্যথা সবার কাছে একটি যন্ত্রণার বিষয়। হালকা মাথাব্যথা কিছু তরল জাতীয় খাবার বা ওষুধ সেবনে দূর হয়। কিন্তু মাথাব্যথার পরিমাণ যদি অধিক হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। মাথাব্যথার সাথে এইচআইভির গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। মাথায় যদি আঘাত পেয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মাথাব্যথা হয়। গর্ভকালীন সময়েও মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তাছাড়া দুর্বলতার মত অন্যান্য লক্ষণগুলো মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই মাথা ব্যাথা হয়ে থাকলে উপরোক্ত লক্ষণ গুলোর উপস্থিতি বোঝা যায়।

মাথা ব্যাথা হলে করণীয়

মাথা ব্যথা হলে অনেক কষ্ট হয়। অনেকেই তা সহ্য করতে পারে আবার অনেকেই তা পারে না। তাই মাথা ব্যথা হলে কিছু করণীয় রয়েছে। যেগুলো অনুসরণ করলে মাথা ব্যথা দূর হবে। যেমন:
  • ঘরে অধিক মাত্রায় আলো ব্যবহার করলে মাথা ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে আলো কমিয়ে দিতে হবে।
  • অনেক সময় অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কিংবা দীর্ঘ সময় টিভি দেখার কারণে মাথাব্যথা হয়। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • কপালে তেল দিয়ে আঙ্গুলের সাহায্যে মেসেজ করতে হবে। তাহলে অনেক আরাম পাওয়া যায়।
  • কফিতে ক্যাফিন থাকার কারণে মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তাই মাথা ব্যাথা হলে কফি খাওয়া যেতে পারে।
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম মাথাব্যথা যদি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের কি করতে হবে এবং আরো জানতে পারলাম জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি। কারণ জ্বর এবং মাথাব্যথা একে অপরের পরিপূরক। অর্থাৎ জ্বর হলে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়

মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়

মাথা ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে মাথা ব্যথা দূর করা যায়। চলুন দেখে নিই সেই উপায় বা পদ্ধতি গুলো কি।
  • মাথা ব্যথা হলে পুদিনা পাতা ব্যবহারে মাথা ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।
  • আপেল খাওয়ার সময় লবণ দিয়ে খেলে মাথা ব্যথা অনেকাংশে হ্রাস পায়।
  • মাথা ব্যাথা হলে পানি পান করুন তাহলে মাথাব্যথা কমে যাবে
  • লবঙ্গ এবং পানি গরম করে তার ঘ্রাণটা নিলে মাথা ব্যথা কমে যায়।
  • মিষ্টি কুমড়ার বিচির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই বিচি যদি ভেজে খাওয়া যায় তাহলে মাথার ব্যথা দূর হবে।

ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি

মাথা ব্যথার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই কারণগুলোর মধ্যে কিছু কারণ রয়েছে যেমন ঘুম পর্যন্ত পরিমাণ না হওয়া, ঘুমের ওষুধ খাওয়া, মদ্যপান, অতিরিক্ত পরিশ্রম, মানসিক চাপ ইত্যাদি। ধূমপানের কারণে মাথাব্যথা হয়। কারণ ধূমপান করলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত টেনশন মাথা ব্যাথার আরেকটি কারণ।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণেও মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তাই এগুলো দীর্ঘক্ষন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। উচ্চস্বরে গান বাজনা করলে মাথাব্যথা হতে পারে। তাহলে বুঝতে পারলাম ঘনঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এবং কারণগুলো আমাদের দূর করার চেষ্টা করতে হবে।
মাথা ব্যাথা

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

পরিশেষে, জ্বর ও মাথাব্যথা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ অনেক ক্ষেত্রে জ্বর হলে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তখন মাথা ব্যথা বেশ কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। তাই জ্বর ও মাথাব্যথা হলে আমাদের কি করা উচিত আর কোনটি থেকে দূরে থাকা উচিত এ বিষয়ে ধারণা পেয়েছি। এবং জ্বর ও মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি এ সম্পর্কেও স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেলটি পড়ে সবাই উপকৃত হবেন এবং অবশ্যই অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url