গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা



আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমন একটি বিষয় যেটি অনাগত সন্তানের জন্ম গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত। বিষয়টি গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশি প্রযোজ্য। গর্ভবতী হওয়ার পর একজন মায়ের প্রথম তিন মাসে যে সর্তকতা গুলো রয়েছে সেগুলো গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করতে হয়। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা
প্রথম তিন মাস একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই তিন মাস সকল গর্ভবতী মায়েরা দুশ্চিন্তায় থাকে। কারণ এই পর্যায়ে এসে গর্ভপাতের মত দুর্ঘটনাও হতে পারে। তাই চলুন জেনে নিই গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা গুলো কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে। বিস্তারিত জানার জন্য শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা

ভূমিকা

প্রতিটি নারী চাই তার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকতে। একজন নারী গর্ভবতী হয়েছে কিনা তা জানার জন্য প্রস্রাব কিংবা বর্তমানে যে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার কাঠি পাওয়া যায় সেটি দ্বারাও পরীক্ষা করা যায়। তবে রক্ত অথবা প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করলে সেটি বেশি নির্ভরযোগ্য। একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকাল সাধারণত ৯ মাস ধরা হয়ে থাকে। এই গর্ভকাল সময়কে সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। ৩ মাস করে মোট নয় মাস।

এই সময়টা শিশুর দৈহিক গঠনের সময়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোর কাঠামো তৈরি হয়। এই সময় অনেকের বমির পরিমাণটা বেশি হয়ে থাকে। এই পর্যায়ে এসে অনেকে খেতে পারে আবার অনেকেই খেতে পারেন না। অনেকের মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। হরমোনের অনেক পরিবর্তন হয় এই সময়টাতে এসে। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা কতটুকু তা জানা একজন গর্ভবতী মহিলার একান্ত প্রয়োজন।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাস এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সময়ে কোন খাবার খাবে আর কোন খাবার খাবে না এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। কারণ ইচ্ছে করলেই সব খাবারগুলো খেতে পারেন না। এই সময় আপনি মিষ্টি আলু খেতে পারেন। কারণ মিষ্টি আলুতে অধিক মাত্রায় বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। কাটাযুক্ত মাছগুলো এ সময় খাওয়া উচিত। মাছে যে ফ্যাটি এসিড রয়েছে তা শিশুর জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। সবুজ শাকসবজি এই সময় প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফাইবার, পটাশিয়াম ইত্যাদি।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবারের তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। শিশুর কোষের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই আমিষ। বাদাম, ডিম, গরুর মাংস, মাছ ইত্যাদি আমিষের উৎস। এছাড়াও চর্বি জাতীয় খাবার, ভিটামিন, শর্করা ইত্যাদি খাবার গুলো খেতে পারেন।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার

গর্ভবতী মায়ের কোন খাবার খাওয়া যাবে না

গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার সময় যে সকল খাবার খাবেন সে সকল বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই সময় কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। এই খাবারগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • সামুদ্রিক মাছ অল্প পরিমাণ গ্রহণ করতে হবে। কারণ এতে পারদের মাত্রাটা অধিক রয়েছে, যা মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দেয়।
  • গর্ভকালীন সময় হাফ বয়েল ডিম খাওয়া উচিত নয়। এর কারণে বমি ভাব, জ্বর ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • গর্ভকালীন সময় আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এ অবস্থায় চা বা কফি খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
  • এই অবস্থায় অতিরিক্ত মিষ্টি খাবেন না। অবশ্য খেজুর বা ফলমূল খাওয়া যায়।
  • কখনোই বেশি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করবেন না। এতে করে ওজন বেড়ে যায়। যার ফলে প্রেসার সহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ গর্ভপাতের মত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের ঘুমানোর নিয়ম

একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুমের প্রয়োজন অনেক বেশি। দিনে এবং রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের দরকার। তাই ঘুমের সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এই সময় ঘুমানোর কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। যা আপনাকে অনুসরণ করে ঘুমাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বাম পাশ হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। বাম পাশ হয়ে শুয়ে থাকলে সহজে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। বামদিকে কাত হয়ে থাকতে হবে এমনটি নয়। এক্ষেত্রে ডান কাত হয়েও ঘুমানো যায়। কারণ একজন মানুষের পক্ষে একপাশ হয়ে ঘুমানো অসম্ভব হয়ে যায়। 
গর্ভবতী মায়ের চিত হয়ে ঘুমানো সঠিক নিয়ম নয়। এতে বাচ্চার কষ্ট হয়। গর্ভবতী মায়ের উপুড় হয়ে শোয়া উচিত নয়। এতে করে শিশুর নড়াচড়ায় সমস্যা হয় এবং মায়ের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যায়। হাঁটু এক জায়গায় করেও ঘুমাতে পারবেন। তবে দুই হাঁটুর মাঝখানে বালিশ দিলে ভালো হয়। তাই উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুমানো উচিত।
গর্ভবতী মায়ের ঘুমানোর নিয়ম

গর্ভবতী মায়ের বাচ্চার নড়াচড়া

একজন গর্ভবতী মা তার বাচ্চার নড়াচড়া তখনই বুঝতে পারে যখন গর্ভকালীন সময় ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহ হয়। তবে যারা নতুন মা হতে চলেছেন তারা এই নড়াচড়া খুব কম বুঝতে পারবেন। কিন্তু যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন তারা এই বিষয়টি খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। সাধারণত খাবার গ্রহণের পর এই নড়াচড়া বেশি বোঝা যায়। তবে খাবার গ্রহণের পর নড়াচড়ার পরিমাণটা অনেক বেশি হয়ে যায়।

৩ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাস খুবই বিপদজনক সময়। এই সময় দেহের অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই পরিবর্তনগুলো পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন দেখা যায়। তবে যারা নতুন তারা ১৮ সপ্তাহে নড়াচড়া তেমন অনুভব করতে পারবেন না। তবে যারা একের অধিক সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এই সময় নড়াচড়ার পরিমাণটা অনেক কম।
বাচ্চার নড়াচড়া
তবে বাচ্চা নড়াচড়া করলে, বাচ্চা যে সুস্থ আছে এই বিষয়টা ইঙ্গিত দেয়। ১২ ঘন্টায় নয় থেকে দশ বার নড়াচড়া করবে। যদি এই নড়াচড়ার পরিমাণটা নয় থেকে দশ বারের কম হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গর্ভবতী সময় সহবাসের নিয়ম

গর্ভাবস্থার সময় কিছু নিয়ম মেনে সহবাস করা উচিত। তিন মাস যৌন মিলন থেকে বিরত থাকাই উত্তম। তবে সহবাস করলে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তবে সতর্ক থাকলে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কম। তবে আপনার সঙ্গিনী যেভাবে চাইবে সে নিয়মটা অনুসরণ করুন।এই সময় যৌন মিলন করা একটু কষ্টকর হয়। কারণ পেট অনেক বড় হয়ে যায়। পেটে যেন চাপ না পরে সেদিকে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।সহবাসের সময় সম্পূর্ণ পুরুষাঙ্গ ভিতরে দেওয়া ঠিক নয়।
দাঁড়িয়ে থেকে সহবাস করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার সঙ্গিনী চেয়ার ধরে মাজাটা সামান্য বাঁকা করতে হবে। পেটে যেন আঘাত না পাই সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। তবে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা যেগুলো রয়েছে সেগুলোর পাশাপাশি, অন্যান্য ক্ষেত্রে যে সতর্কতা গুলো অবলম্বন করতে হবে সেগুলো অবশ্যই অনুসরণ করে চলতে হবে।

গর্ভবতী অবস্থায় কত মাস পর্যন্ত সহবাস করা যায়

এইরকম প্রশ্ন অনেকের মনে জন্ম নেয়। আসলে এই প্রশ্নের উত্তর অনেকের জানা নেই, আবার অনেকেই জানেন। এই সময়টাতে সহবাস করলে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। এখানে সহবাস করার নিয়ম আলোচনা করা হয়েছে। প্রসব বেদনা যতক্ষণ আরম্ভ না হয় তার আগ পর্যন্ত যৌন মিলন করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই সতর্কতার সহিত যৌন মিলন করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় সহবাস করার উপকারিতা

অনেকেই মনে করেন গর্ভাবস্থায় সহবাস করা অত্যন্ত বিপদজনক। কিন্তু গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে অনেক উপকার রয়েছে।
  • গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে দেহের রক্তের সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।
  • নিয়মিত সহবাসের ফলে দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়।
  • গর্ভাবস্থায় সহবাস করার আরেকটি উপকারিতা হচ্ছে রক্তচাপ কমায়।
  • এই সময় নিয়মিত যৌন মিলন করলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় কষ্ট কমে যায়।
  • গর্ভকালীন সময় একজন গর্ভবতী মা অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন। এই দুশ্চিন্তা মা ও শিশুর উভয়ের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত সহবাস করলে এই দুশ্চিন্তা অনেকাংশে কমে যায়।
তবে গর্ভাবস্থায় সহবাস করার উপকারিতা যে অনেক, এটা আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়ম মেনে সহবাস করাই শ্রেয়।

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

অবশেষে, গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা গুলো কি, গর্ভবতী মায়ের কি কি খাবার খাওয়া যাবে, আর কোন খাবার খাওয়া যাবে না, গর্ভবতী মায়ের ঘুমানোর সঠিক পদ্ধতি কি, সহবাস করার নিয়ম কানুন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি উপরোক্ত বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন।

আর যদি কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্টে করতে পারেন। আর নতুন নতুন তথ্য পাওয়ার জন্য এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনি যদি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন, তাহলে অবশ্যই পোস্টটি অন্যজনের সাথে শেয়ার করে দিন যেন সে ব্যক্তি উপকৃত হতে পারে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url