সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন



আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিষয়টি হচ্ছে  সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কতটুকু রয়েছে তা হচ্ছে এই আলোচনার প্রধান বিষয়। সজনে পাতা আমরা অনেকেই শাক হিসেবে খেয়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই জানেন না এর উপকারিতা কতটুকু। এবং এই সজনে পাতা খাওয়ার পদ্ধতি গুলো জানা নেই।
শুধু এই সজনে পাতা খাদ্য হিসেবে নয়, এটি বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যা আমরা নিচের আর্টিকেলের মাধ্যমে সজনে পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ।তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা 

ভূমিকা

গ্রামাঞ্চলে সজনে পাতা আসলে সাজনা পাতা নামে বেশি পরিচিত। আসলে এই সজনে পাতায় পুষ্টিগুণে ভরপুর। সজনে গাছের প্রায়ই অংশ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে সজনে পাতার উপকারিতা অনেক বেশি। এই পাতা উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস সহ আরো বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করা হয়। সজনে পাতাতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন ইত্যাদি উপাদান গুলো বিদ্যমান রয়েছে। এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। যা সজনে পাতায় পাওয়া যায়।

বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। ডায়াবেটিস সহ হার্টের জন্য উপকারী। তাই ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা তো রয়েছেই পাশাপাশি অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তাই আপনার খাবারের তালিকায় সজনে পাতা রাখতে পারেন।

সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে পাতার উপকারিতা অনেক। এই পাতাই পুষ্টিগুনে ভরপুর থাকায় শরীরের জন্য কার্যকরী। এই সজনে পাতায় যে সকল উপকার রয়েছে তা জেনে নিই।
  1. ভিটামিনের উৎসঃ সজনে পাতায় ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। তবে এটিতে কমলা লেবুর তুলনায় অনেক ভিটামিন সি রয়েছে। ধরা হয় এটি প্রায় সাত গুণ। ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ অনেক রয়েছে। দুধে যে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে এই সজনে পাতায়।
  2. সুগারের মাত্রা ঠিক রাখাঃ দেহের সুগারের মাত্রা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সজনে পাতা সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি ডায়াবেটিকসের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকরী।
  3. প্রতিষেধকঃ বসন্ত রোগ হলে এই রোগের প্রতিষেধক হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। এমনকি সর্দি কাশি হলেও এর কার্যকারিতা অনেক।
  4. ক্লান্তি ব্যথা দূরঃ সজনে পাতায় যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,জিংক ইত্যাদি রয়েছ তা আমাদের শরীরের ক্লান্তি এবং ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
  5. উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ সজিনা পাতার রস খেলে উচ্চ রক্তচাপ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  6. রুচি বৃদ্ধি করেঃ রুচি বৃদ্ধি করতে সজনে পাতা খেতে পারেন।
  7. ত্বক ও চুলে ব্যবহারঃ সজনে পাতা ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে কার্যকরী উপাদান। সজনে পাতা পাউডার করে সেটি ত্বকে বা চুলে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বকে নতুন কোষ গজাতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।

সজনে পাতার অপকারিতা

সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে।যেমন
  • যাদের ব্লাড প্রেসার রয়েছে তারা সজনে পাতার গুড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি খেলে ব্লাড প্রেসারের মাত্রাটা অনেক কমে যায় তা আপনার জন্য ক্ষতি হতে পারে।
  • সজনে পাতার গুড়ায় ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা খেলে ক্ষুধা কম লাগে। যার ফলে গ্যাসসহ অন্যান্য অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
  • সজনে পাতা খেলে অনেকের উপকার হলেও ক্ষতিও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী নারী বা ছোট বাচ্চাদের খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। কারণ এতে প্লান্ট কেমিক্যাল রয়েছে যা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • সজনে পাতা খাওয়া ভালো। কিন্তু পাতার সাথে যে ডাল থাকে তা আমাদের শরীরের ক্ষতি সাধন করে থাকে।
  • অধিক পরিমাণ সজনে পাতা খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই উপরোক্ত অপকারিতা গুলো বিবেচনা করে সজনে পাতা খাওয়া উচিত।

সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই সজনে পাতা খেয়ে থাকি। এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কেও জানি। কিন্তু এই সজনে পাতা কিভাবে খেতে হবে আপনি কি তা জানেন? জানা না থাকলে জেনে নিন-
  • প্রথমঃ সজনে পাতা জুস করে খেতে পারেন। প্রথমে পাতা পানিতে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। তারপর ব্লেন্ডারে কিছু পানি এবং স্বাদ বাড়ানোর জন্য লবণ, জিরা ইত্যাদি মিশাতে পারেন। তারপর পুরো মিশ্রনটি ব্লেন্ড করে নিন। ছেকে নিন এবং একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • দ্বিতীয়ঃ এটি ভর্তা হিসেবে খেতে পারেন। কাঁচা হলে সবচেয়ে ভালো। কারণ পানিতে সিদ্ধ করলে এর সমস্ত গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কাঁচা সজনে পাতা সুন্দরভাবে বেটে নিতে হবে। এর স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য এর সাথে যেগুলো দেওয়া প্রয়োজন সেগুলো দিয়ে ভর্তা করে খেতে পারেন।
  • তৃতীয়ঃ সজনে পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। সজনে পাতা শাক হিসেবে অনেকেই খেয়ে থাকে। তাইতো সজনে পাতা যেভাবে খান না কেন এর উপকারিতা অবশ্যই পাবেন।

সজনে পাতার পাউডার খাওয়ার নিয়ম

সজনে পাতা প্রায় সকলেই খেয়ে থাকেন।কিন্তু সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের কতটুকু ধারণা আছে।এই পাতা শাক বা ভর্তা করে খাওয়া যায় এবং তা পাউডার করেও খাওয়া যায়। সজনে পাতা রোদে শুকিয়ে পাউডার করে রেখে দিন। পরবর্তী সময়ে তা অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। চা বা কফির সাথে এ পাউডার খাওয়া যায়। স্যুপের সাথে ব্যবহার করে খাওয়া যায়। বিভিন্ন খাদ্যের সাথে সজনে পাউডার ব্যবহার করে খাওয়া যায়।

ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে পাতার নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। সজনে পাতা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ত্বকের যত্নে সজনে পাতার ব্যাপক ব্যবহার হয়। আর ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের অনেক উপকার হয়ে থাকে। যেমন
  • ত্বকে সজনে পাতা ব্যবহার করলে প্রোটিনের অভাব পূরণ হয়।
  • ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।
  • পাতাতে যে ভিটামিন সি রয়েছে তা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সজনে পাতার গুঁড়া ব্যবহার করলে ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর হয়।
  • আপনার যদি ঠোঁট ফেটে যায় তাহলে আপনি সজনের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • ত্বকে যদি কোন ক্ষত থেকে থাকে তাহলে সজনে পাতার গুঁড়া ব্যবহার করলে ক্ষত ভালো হয়ে যায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
তাই উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে সজনে পাতা ব্যবহার করলে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

সজনে পাতার রসের উপকারিতা

সজনে পাতার রস অনেক রোগে ব্যবহৃত হয়। সজনে পাতাতে যেরকম উপকার রয়েছে তেমনি পাতার রসেও অনেক উপকার রয়েছে।
  • শ্বাসকষ্ট দূর করতে সজনে পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশে হ্রাস করে এই সজনে পাতার রস।
  • সজনে পাতার রস হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সজনে পাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ উপশম হয়।
  • মাথার খুশকি কমাতে সজনে পাতার রস বেশ উপকারী।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন রকম উপকার রয়েছে এই সজনে পাতার রসে।

শেষ কথা

অবশেষে, সজনে গাছসহ এর সকল অংশ রোগের মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উপরের আলোচনায় স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে যে, সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে আর কোথায় ব্যবহার করা যাবে না, আশা করি এটাও বুঝতে পেরেছেন।

তাই উপরের আলোচনা যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে সবার সাথে শেয়ার করুন এবং  নতুন নতুন তথ্য পেতে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ।পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url