মাল্টার রস মুখে দিলে কি হয়-কমলার খোসার উপকারিতা



আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আজকের বিষয় হচ্ছে মাল্টা এবং কমলা নিয়ে। মালটা এবং কমলা বছরের প্রায় সব সময় পাওয়া যায়। মালটা এবং কমলা এই দুটোর সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও, এই দুটোকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলি।
মাল্টার রস মুখে দিলে কি হয়-কমলার খোসার উপকারিতা
তাই আজকে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব মালটা এবং কমলা সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য। মালটা এবং কমলা দুটোই পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। তাই চলুন জেনে নেই মাল্টার রস মুখে দিলে কি হয় এবং কমলা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় ইত্যাদি সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ মাল্টার রস মুখে দিলে কি হয়-কমলার খোসার উপকারিতা

ভূমিকা

মালটা এবং কমলা দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় অনেকেই এই দুটোকে এক করে ফেলে। মাল্টার চেয়ে কমলা কিছুটা দাম বেশি। মালটা সস্তা হওয়ায় এটি সবার ক্রয়ের মধ্যে থাকে। এই দুই ফল অনেক পুষ্টি গুণে ভরপুর হওয়ায় এটি দেহের জন্য অনেক কার্যকরী। এই ফলগুলোতে ভিটামিন সি, বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে। এই দুটো ফল সবার কাছে খেতে খুব পছন্দনীয়। ক্যান্সার সহ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এই ফল। এমনকি হজমশক্তি বাড়াতেও বেশ কার্যকরী। তাই কমলা এবং মালটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মনোযোগ সহকারে নিচের আর্টিকেলটি পড়তে হবে।

মাল্টার উপকারিতা ও অপকারিতা

মাল্টা অনেক সুস্বাদু একটি ফল। এই ফলে অনেক ভিটামিন এবং অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা দেহকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শুধু যে মাল্টার গুনাগুন বা উপকারিতা রয়েছে এমন নয় এর অপকারিতাও রয়েছে। তাই প্রথমে আগে জেনে নিব মাল্টার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
  • সর্দি কাশি দূর করতে মাল্টা অধিক কার্যকরী।
  • মাল্টা খেলে কিডনি ভালো থাকে। কিডনিতে পাথর জমতে পারে না‌।
  • ঠোঁট ফাটা ভালো করতে বিশেষ অবদান রাখে।
  • মাল্টা খেলে ত্বক অনেক সতেজ থাকে।
  • কোলন ক্যান্সার রোধে মাল্টা সাহায্য করে থাকে।
  • মাল্টা খাওয়ার ফলে পাকস্থলী অনেক ভালো থাকে।
  • উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে মালটা খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
  • মাল্টা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহু গুনে বেড়ে যায়।
  • মাল্টা খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ ভালো হয়ে যায়।
অপকারিতা সমূহঃ
  • যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা মাল্টা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • ডায়াবেটিস রোগীরা যদি মাল্টা খেতে চায়, তাহলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • মাল্টাতে অধিক পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যার ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মালটা অধিক উপকারী ফল হলেও, এর অপকারিতা রয়েছে। মালটা খাওয়ার সময় এই অপকারিতা গুলো বিবেচনা করে খাওয়া উচিত।
মাল্টার উপকারিতা ও অপকারিতা

মাল্টা খাওয়ার সঠিক সময়

আমরা সাধারণত বিভিন্ন সময় ফল খেয়ে থাকি। কিন্তু এই ফলগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত। নির্দিষ্ট সময়ে না খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেভাবে মালটাও সঠিক সময়ে খেতে হবে। মালটা খাওয়ার সময় একটু টক লাগে। এতে ভিটামিন সি অনেক বেশি রয়েছে। সকালে নাস্তা করা শেষ হলে এটি ভর পেটে খেতে পারেন। খালি পেটে ফল খাওয়া মোটেই উচিত হবে না। এতে করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভর পেটে খেলে এই সমস্যা আর হবে না। এছাড়া বিকেলেও মাল্টা খেতে পারেন। আবার অনেকে প্রশ্ন করে, খালি পেটে মাল্টার রস মুখে দিলে কি হয়? এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে মাল্টার রস খাওয়া উচিত।

মাল্টার খোসার উপকারিতা

শুধু যে মাল্টাতে উপকার আছে এমন নয়, এর খোসাতে অনেক উপকারিতা রয়েছে। অনেক কিছু না জানার কারণে ফল খাওয়ার পর খোসা ফেলে দিই। কিন্তু এই খোসার উপকারিতা জানলে আপনি কখনোই খোসা ফেলবেন না।
  • খোসাতে লাইমোনেন নামক একপ্রকার উপাদান রয়েছে যা চামড়ার ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • খোসাতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় এটি পরিপাকে সাহায্য করে।
  • সাইট্রিক এসিড বিদ্যমান থাকায় ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ত্বকের বিভিন্ন রকম দাগ, ব্রণ, মেছতার দাগ ইত্যাদি ভালো হয়।
  • খোসা দ্বারাও ঘরকে সুগন্ধি ময় করে তুলতে পারেন। এক্ষেত্রে পানিতে খোসা এবং সামান্য পরিমাণ সুগন্ধি মসলা দিয়ে দিন। এরপর পানি ফুটাতে হবে। ফুটানোর পর রেখে দিন।কিছুক্ষণ পর আপনার ঘরে সুগন্ধি ছড়াবে।

খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে মালটা খেলে বা মাল্টার রস মুখে দিলে কি হয় এই সম্পর্কে এখন জেনে নেব। খালি পেটে খাবার ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
  • সকালের নাস্তা করার অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিঃ পূর্বে এটি খেলে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দ্রুত পূরণ হয়।
  • শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন গুলো বের করার ক্ষেত্রে খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
  • যদি খালি পেটে ফল খাওয়া যায় তাহলে কর্মক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে যায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। অনেকের ধারণা গর্ভাবস্থায় মাল্টা খেলে বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আসলে মাল্টাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি শিশুর মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান। এছাড়াও মাল্টাতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি রয়েছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়া মাল্টার রসে কি কি উপকার হয় সে সম্পর্কে জেনেছি।

কমলার খোসা দিয়ে ত্বকের যত্ন

প্রায় প্রতিটি ফলের খোসাই বিশেষ উপকার থাকে। যদি আমরা এই খোসা গুলোর যথাযথ ব্যবহার করি, তাহলে এর উপকারিতা গুলো আমরা অবশ্যই পেয়ে যাব। কমলার খোসা দিয়ে ত্বকের যত্ন করা হয়। যেমন
  • প্রথমে খোসা গুড়ো করে নিন। তারপর এই গুঁড়ার সাথে গোলাপজল যুক্ত করে একটি মিশ্রণ বানিয়ে ফেলুন। এবং এটি মুখে দিয়ে 10 থেকে 15 মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। আপনার ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
  • ১ চামচ এলোভেরা জেল এবং খোসার গুঁড়া এই দুটোর মিশ্রণ তৈরি করুন। এবং এটিও ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। পরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে আপনার ত্বক সুন্দর থাকবে।
  • এক্ষেত্রে খোসার গুঁড়া এবং টক দই নিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে ফেলতে হবে। প্যাকটি অন্তত ২০ মিনিট ত্বকে দিয়ে রাখতে হবে। পরবর্তীতে পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। তাহলে আপনার ত্বক অনেক সতেজ এবং কোমল হবে।

কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা

এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব কমলার খোসার উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়ে। প্রতিটা জিনিসের ভালো এবং মন্দ এই দুটোই রয়েছে। তাই চলুন, আগে উপকারিতা গুলো জানে নিই।
  • খোসায় পলিমেথক্সিলেটেড ফ্ল্যাভোনস রয়েছে যা কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • কমলার খোসা সর্দি, মাথা ব্যথা এমন কি বাতের ব্যথা উপশমে অনেক কার্যকরী।
  • পেটের গ্যাসের সমস্যা, বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যাগুলো ভালো করে দেয়। এক্ষেত্রে খোসা মধুর সঙ্গে খেতে হবে।
  • কমলার খোসা মাথার খুশকি দূর করে চুলকে করে তুলে ঝলমলে। খোসা পানিতে ফুটানোর পর সেই পানি ব্যবহার করতে পারেন।
  • যদি ঘুম না হয় সেক্ষেত্রে খোসা পানির সঙ্গে ব্যবহার করে গোসল করতে পারেন। তাহলে এই সমস্যা দূর হবে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে কমলার খোসা।
অপকারিতা সমূহ নিম্নরূপঃ
  • এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে বদহজম সহ পেট ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • যারা হার্টবার্নে ভোগেন তাদের এটি খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
  • অতিরিক্ত খোসা খাবার ফলে ডায়রিয়া হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়।
  • যদি কিডনির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এটি খাওয়া উচিত হবে না।

কমলার খোসার ব্যবহার

আমরা ইতিপূর্বে কমলার খোসার ব্যবহার সম্পর্কে জেনেছি। কোন কোন ক্ষেত্রে কমলার খোসা ব্যবহার করা হয় এবং কিভাবে ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এটি ত্বক থেকে শুরু করে চুল বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এগুলো ছাড়াও এর আরো অনেক ব্যবহার রয়েছে।

কমলার খোসা চুলের যত্নে

কমলার খোসা চুলকে সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর একটি উপাদান। কমলার খোসা ব্যবহারে চুল যেরকম সুন্দর এবং কোমল হয়, ঠিক তেমনি মাথার অতিরিক্ত খুশকি দূর করতে ভূমিকা রাখে। তাই আমরা সঠিকভাবে কমলার খোসা ব্যবহার করব।

শেষ কথা

অবশেষে, উপরের আলোচনা মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম মালটা এবং কমলার সকল গুনাগুন সম্পর্কে। এছাড়াও মাল্টার রস মুখে দিলে কি হয় এবং কমলার খোসার উপকারিতা কি কি, মাল্টার খোসা ও কমলার খোসার ব্যবহার, মাল্টার উপকারিতা ও অপকারিতা, কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

আশা করি, আপনি উপরের আলোচনার মাধ্যমে মাল্টা এবং কমলা এই দুটো ফল সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। তাই আপনার জানার সাথে সাথে অন্যজন যেন জানতে পারে সেজন্য অন্যের সাথে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। আর নতুন নতুন তথ্য পেয়ে এর ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। অসংখ্য ধন্যবাদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url