আপনি কি জানেন অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে



আসসালামু আলাইকুম। আজকে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। বিষয়টি হলো ঘাম নিয়ে। গরমের দিনে সকলের শরীর ঘেমে যায়। কিন্তু অনেকে দেখি অতিরিক্ত পরিমাণ ঘেমে গেছে। শরীর ঘেমে যাওয়া উপকার নাকি ক্ষতিকর সে বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে।
অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
যদি ঘাম সম্পর্কে আমাদের জানা না থাকে তাহলে ঘামের ক্ষতিকর দিকগুলো আমরা সনাক্ত করতে পারবো না। তাই চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ এবং কি কি কারণে শরীর ঘেমে যেতে পারে ইত্যাদি সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ

ভূমিকা

গরমে শরীর ঘামার বিষয়টি নতুন নয়। গরমে শরীর ঘামতেই পারে।কিন্তু অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া অস্বাভাবিক ব্যাপার। শরীর ঘেমে গেলে একটা অস্বস্তিকর বোধ হয়। শরীর থেকে অনেক সময় দুর্গন্ধ বের হয়। তখন সবার সাথে উঠতে বসতে এমনকি চলাফেরা করার সময় অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু এই শরীর ঘামার ফলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। দেহের সকল বর্জ্য পদার্থ ঘামের সাথে বের হয়ে যায়।

শরীর ঘামার ফলে দেহ অনেক শীতল হয়ে যায়। গরমের দিনে যদি শরীর না ঘামে তাহলে বুঝতে হবে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বলা যায় ঘামের উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তাই ঘামের উপকারিতা কি কি এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি হতে পারে সেগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। এর সাথে আরো জানতে হবে অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ এবং রোগগুলো কি ধরনের।

অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়

আমরা প্রায়ই সময় ঘেমে যাই। এই ঘামের কারণে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কারণ শরীর ঘামলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আরো বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। তাই এই ঘাম কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে দূর করা যায় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
  • বেকিং সোডার সাথে সামান্য পরিমাণ তেল দিয়ে সেটি শরীরে ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • টমেটো রস খেলে অতিরিক্ত ঘাম দূর হয়। এতে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট বিদ্যমান থাকায় ঘাম কমাতে সাহায্য করে।
  • আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করার কারণে অনেক সময় অতিরিক্ত ঘাম হয়। তাই এগুলো খুব কম ব্যবহার করাই উচিত।
  • শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি দেখা দিলে শরীর ঘামে। তাই ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবারগুলো বেশি বেশি খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত ঘাম দূর করার জন্য আয়োডিনযুক্ত খাবারগুলো না খাওয়াই উচিত।
  • অনেক সময় আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। দুর্বল হওয়ার কারণেও শরীর ঘামে। তাই পুষ্টিগুনে ভরপুর এমন খাদ্য গুলো খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত ঘাম দূর করার আরেকটি উপায় হচ্ছে লবণ পানির ব্যবহার। অর্থাৎ গোসল করা।

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি অতিরিক্ত ঘাম স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে থাকে। আসলে এ ধারণা করা ভুল হবে। অতিরিক্ত ঘাম হলে এর প্রতিকারও রয়েছে। তাই চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও প্রতিকারগুলো কি কি।
কারণঃ অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার পিছনে কিছু কারণ দায়ী থাকে। ভয়ংকর স্বপ্ন দেখার কারণেও কিন্তু শরীর ঘেমে যায়। আবার হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত ঘাম হয়। তবে এরকম সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের কারণেও শরীর ঘামে। ডায়াবেটিস রোগ থাকলে সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়। খুব উত্তেজিত হয়ে গেলে শরীর ঘামতে পারে। এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে শরীর অতিরিক্ত ঘেমে যায়।.
প্রতিকারঃ
  • বিভিন্ন ধরনের ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
  • শরীরে বিভিন্ন প্রসাধনীর ব্যবহার কমিয়ে দিন। কারণ এগুলো অতিরিক্ত ঘামের সৃষ্টি করে।
  • দুর্বলতার কারণেও অতিরিক্ত ঘাম হয়। তাই যে খাদ্য গুলোতে পুষ্টির উপাদান বেশি সেগুলো খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত ঘাম কমানোর জন্য পোশাক ঢিলেঢালা পরতে হবে।
  • ঘর্মাক্ত স্থানে চন্দন ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ঘামের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
  • সাধারণত আমরা ঘামের হাত থেকে বাঁচার জন্য পাউডার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই পাউডার ঘাম বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। তাই পাউডার না।

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

অতিরিক্ত ঘাম কমানোর ঔষধ

অতিরিক্ত ঘামার ফলে মানুষ বিরক্তিকর হয়ে উঠে। সকলের কাছে অতিরিক্ত ঘাম মোটেই কাম্য নাই। তাই অতিরিক্ত ঘাম কমানোর জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ঘাম কমানো সম্ভব। প্রথম ওষুধ হচ্ছে ধূমপান পরিত্যাগ করা। Botulinum toxin Inj দিলে অতিরিক্ত ঘাম কমে যাবে। এছাড়াও Dricare 20% Solution ঘাম কমানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। যদি চা কফি খাবার অভ্যাস থাকে তাহলে সেটি অল্প পরিমাণ গ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে ভিটামিন ট্যাবলেট খেতে পারেন। তাই অতিরিক্ত ঘাম হলে উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করলে ঘাম কমানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে।

অতিরিক্ত মাথা ঘামার কারণ কি

অতিরিক্ত মাথা ঘামার সমস্যাটি প্রায়ই দেখা যায়। আসলে মাথা ঘামার কারণ রয়েছে। কি কারনে মাথা ঘামে আমরা অনেকেই সেটা জানি না। তাই আমাদের জানা উচিত অতিরিক্ত মাথা ঘামার কারণ কি। অতিরিক্ত মাথা ঘামার প্রধান কারণ হচ্ছে উদ্বেগ। অনেকের প্রচুর মাথা ঘেমে যাই। অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা করলেও কিন্তু অতিরিক্ত মাথা ঘামার সম্ভাবনা থেকে যায়। এমন অবস্থা হয়ে যাই পুরো মাথা ঘেমে ভিজে যায়।

কপাল ঘামা কিসের লক্ষণ

আমরা বিভিন্ন কাজের সময় কিংবা গরমে কপাল ঘেমে থাকে। কপাল অনেকের বেশি ঘামে আবার অনেকের কম ঘামে। অনেকে বলে থাকে কপাল ঘামা অন্য কিছুর লক্ষণ প্রকাশ করে। এমন অবস্থা হয় কপালের ঘাম মুছতে মুছতে অনেকে বিরক্ত হয়ে যায়। কপাল ঘামলে ভালো কিছু হয়, অনেকে এরকম ধারণা করে। কিন্তু কপাল ঘামার সাথে সাথে অনেকের নাক ঘামতে দেখা যায়। তাই ঘামা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ঘামলে সেটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাই এগুলোকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

বাচ্চাদের মাথা ঘামার কারণ

বাচ্চাদের মাথা ঘামার সেরকম বড় কারণ নেই বললেই চলে। কারণ বাচ্চাদের মাথায় সচরাচর ঘামে না। বাচ্চারা ঘামতে পারে, তবে এটা নিয়ে তেমন কোন চিন্তার কারণ নেই। ভিটামিন ডি এর অভাব হলে বাচ্চার মাথা ঘামতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় জন্মগত কারণেও বাচ্চার মাথা ঘেমে যেতে পারে। তাই আমরা এ সকল বিষয়ে সতর্ক থাকব এবং সমস্যা জটিল হয়ে গেলে, দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বাচ্চাদের মাথা ঘামার কারণ

ছোট বাচ্চাদের হাত পা ঘামে কেন

প্রায় ছোট বাচ্চাদের হাত পা ঘামতে দেখা যায়। ঘামার অনেকগুলো কারণ থাকে। কিছু কিছু ঘামের গ্রন্থি রয়েছে যেগুলোর কারণে শিশু ঘেমে থাকে। একটি শিশুর জন্মের পর তার এই গ্রন্থিগুলো অপরিপক্ক থাকে। এই গ্রন্থিগুলো পরিপক্ক না হওয়ার কারণে অনেক শিশু ঘেমে যায়। শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে এই গ্রন্থি গুলো পরিপক্ক হয়ে ওঠে। যার ফলে ঘামের পরিমাণটা কমে যায়। তবে কিছু সময় দেখা যায় শিশুরা পোশাকের কারণেও ঘেমে থাকে। শিশুর পোশাকের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন পোশাকটা আরামদায়ক হয়। তাই শিশুর সঠিকভাবে যত্ন নিন। শিশুদের যদি কোন অসুখ থেকে থাকে সেক্ষেত্রে ঘামতে পারে।

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায়

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এই উপায় গুলো ব্যবহার করলে হাত পা ঘামা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
  • হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির একটি উপায় হচ্ছে অধিক পরিমাণ পানি পান করা।
  • হাত পা ঘামা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আলুর ব্যবহার খুবই ফলপ্রসু।
  • হাত পায়ে গোলাপ জল ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ভুট্টার আটা ব্যবহার করলে হাত পা ঘামা অনেকাংশে কমে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রথমে ভুট্টার আটা নিতে হবে। সেই আটার সাথে অল্প পরিমাণ বেকিং সোডা দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। পরবর্তীতে এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • যখন ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দেয় তখন হাত পা ঘামে। তাই যে খাবারগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে সেগুলো খেতে হবে। যেমন: শিম,দই,বাদাম,আলু ইত্যাদি।
  • হাত পা ঘামা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঝাল খাবার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।

শেষ কথা

অবশেষে, উপরের আলোচনা মাধ্যমে সহজেই বুঝতে বোঝা গেল যে, ঘাম স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। এবং এই ঘাম শরীরে কি কি প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কেও জানলাম। আশা করি অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই পেয়ে গেছেন। এছাড়া অতিরিক্ত ঘাম কিভাবে দূর করা যায় এই বিষয়ে অবগত হয়েছি।

এই আর্টিকেলে ঘামের সকল প্রকার দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং এ আর্টিকেলটি পড়ে অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন। আর অন্যের সাথে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url