কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ


আসসালামু আলাইকুম। আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে সেটি হচ্ছে কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা ও সকল গুনাগুন সম্পর্কে। কলা সবাই খেতে পছন্দ করে এবং খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। বিশেষ করে এখানে কাঁচা কলা সম্পর্কে বলা হবে। সাধারণত কলার সকল গুনাগুণ সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে।
কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
তাই আজকে কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আরো আলোচনা করা হবে কাঁচা কলা কিভাবে খেতে হয় সেই সম্পর্কেও। সুতরাং কাঁচা কলার সকল অজানা তথ্যগুলো জানার জন্য মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃকাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ

ভূমিকা

এমন কোন ব্যক্তি নেই যে, কলা খেতে অপছন্দ করে। কারণ কলা সবার কাছে একটি প্রিয় ফল। ছোট থেকে বড় সবাই কলা খেতে পছন্দ করে। তবে অনেকে কাঁচা কলা সবজি হিসেবে খেতে পছন্দ করেন। এই কাঁচা কলাতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাঁচা কলা অনেক উপকারী। যেভাবে আমরা পাকা কলা খেয়ে থাকি, কাঁচা কলা সে পরিমাণ খাওয়া হয় না।

অর্থাৎ কাঁচা কলা আমরা খুব অল্প পরিমাণে খেয়ে থাকি। কাঁচা কলাতে যে উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো পেতে হলে আমাদের কাঁচা কলা খেতে হবে। কাঁচা কলাতে পটাশিয়াম, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ম্যাগনেসিয়াম সাথে ভিটামিন সি ইত্যাদি পুষ্টিগুণ গুলো রয়েছে। তাই আজকে আমরা কাঁচা কলার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিব। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

কাঁচা কলার উপকারিতা

কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন। কাঁচা কলা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। কেউ ভর্তা করে খাই, আবার কেউ তরকারি হিসেবে রান্না করে খায়। তাই চলুন জেনে নিই কাঁচা কলা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
  • কাঁচা কলা খেলে ওজন কমে। কাঁচা কলাতে ফাইবার রয়েছে। যার কারণে ক্ষুধা কম লাগে। ফলে ঘনঘন খাওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • কাঁচা কলাতে পটাশিয়াম থাকার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • কাঁচা কলা খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়। ডায়রিয়ার সমস্যা সমাধানে কাঁচা কলা খুবই কার্যকরী।
আরও পড়ুনঃ সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
  • কাঁচা কলাতে ফাইবার রয়েছে, যা আপনার হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা কলা উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ও হার্ট ভাল রাখে।
  • কিডনি জনিত সমস্যা সমাধানে কাঁচা কলা খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
    উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও কাঁচা কলা ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে। অর্থাৎ এগুলো নিয়ন্ত্রণে কাঁচা কলা খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

    কাঁচা কলার অপকারিতা

    কাঁচা কলা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কাঁচা কলা খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে এটা কি আমরা জানি? অর্থাৎ কাঁচা কলা খেলে যে রকম উপকার পাওয়া যায়, তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তবে এর অপকারিতা নেই বললেই চলে। এর কিছু অপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ
    • আমরা জানি কাঁচা কলাতে ফাইবার রয়েছে। যদি অতিরিক্ত পরিমাণ কাঁচা কলা খাওয়া হয় তাহলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
    • কাঁচা কলা বেশি খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে।
    • কাঁচা কলাতে হিস্টামিন থাকায় হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
    • যারা নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকেন, তারা কাঁচা কলা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
    • কাঁচা কলা বেশি খেলে পেট ব্যথা সহ বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
    তাই কাঁচা কলা খাওয়ার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে, যেন পরবর্তীতে কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয়।

    গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

    গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মা এবং বাচ্চা দুজনেরই উপকার হয়ে থাক। তাই চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কি কি উপকার হয়।
    • কলাতে ভিটামিন সি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
    • কলাতে থাকা ভিটামিন, আয়রন ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের শরীরে শক্তি যোগায়।
    • প্রায় দেখা যায় গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়। এই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই কলা।
    • কলাতে ভিটামিন বি ৬ উপস্থিত। যা বমি বমি ভাব, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলো দূর করতে ভূমিকা রাখে।
    আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
    • হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এই কলা।
    • শিশুর স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করে এই কলা।
    • গর্ভাবস্থায় অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
    • কলাতে অধিক পরিমাণে আয়রন থাকায়, আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।
      তবে গর্ভাবস্থায় কলা খেলে উপরোক্ত উপকারিতা ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিনের অভাবসহ মিনারেলের অভাবও পূরণ করে থাকে।

      কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা

      কাঁচা কলাতে শুধু উপকার রয়েছে এমন নয়, কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা অনেক রয়েছে। এই খোসার উপকারিতা গুলো না জানার কারণে আমরা অনেকে ফেলে দিই। তাই আজকে কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা জানলে কখনোই আর খোসা ফেলে দেবেন না। তাই চলুন জেনে নিই কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা গুলো কি কি।
      • কলার খোসাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হয়েছে যা মুখের দাগ দূর করে।
      • অনেক সময় দেখা যায় পোকামাকড় কামড়ের ফলে চুলকাতে থাকে, কিন্তু কলার খোসা ব্যবহার করলে চুলকানি ভালহয়।
      • কলার খোসা ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ ভালো হয়।
      আরও পড়ুনঃ কমলার খোসার উপকারিতা
      • গহনা কিংবা চামড়ার জুতা পরিষ্কার করার কাজে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। এতে গহনার উজ্জ্বলতা বাড়ে।
      • দাঁতের হলদে ভাব দূর করতেও কলার খোসা অত্যন্ত উপকারী।
      • অনেকের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। এই কালো দাগ দূর করতে কলার খোসা খুবই উপকারী।
        উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও কাঁচা কলার খোসা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাই খোসা ফেলে না দিয়ে আমরা ব্যবহার করার চেষ্টা করব।

        কলার খোসা মুখে দিলে কি হয়

        আমরা অনেকেই জানি না, কলার খোসা মুখে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এই খোসা মুখে ব্যবহার করলে ত্বকের অনেক উপকার হয়। ত্বকে যদি কোন বলিরেখা থাকে সেটি দূর করতে খুবই উপকারী এই খোসা। এছাড়াও মুখে ব্রণের দাগ, চোখের নিচে কালো দাগ ইত্যাদি সমস্যা গুলো দূর করে। কলার খোসা মুখে ব্যবহার করলে ত্বকের সজীবতা ফিরে আসে এবং ত্বক অনেক মসৃণ হয়। তাই কলার খোসা মুখে ব্যবহারে যেমন মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি মুখ ছাড়াও আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার রয়েছে সেগুলোতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রগুলো উপরে আলোচনা করা হয়েছে যা আপনি সহজেই জানতে পারবেন।

        কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম

        কাঁচা কলা প্রায় লোকেই খেতে পছন্দ করে। এই কাঁচা কলা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে। কেউ ভর্তা করে খায়, কেউ ভাজি করে খায়, আবার কেউ তরকারি হিসেবে রান্না করে খায়। তবে কাঁচা কলা রান্না করে খেতে বেশি দেখা যায়।এই কাঁচা কলার সাথে ছোট মাছ দিয়ে রান্না করলে বেশি সুস্বাদু হয়। 
        কাঁচা কলার বড়া তৈরি করেও খাওয়া যায়। তবে যেভাবে খাওয়া হোক না কেন এর উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়। কাঁচা কলা যেভাবে খেলে বেশি স্বাদ পাওয়া যাবে, আপনি সেভাবে খেতে পারেন কোন সমস্যা নেই।

        কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ

        আমরা যেহেতু কাঁচা কলা খেয়ে থাকি, সেহেতু এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা কলাতে পটাশিয়াম, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬ ইত্যাদি রয়েছে। কাঁচা কলাতে ফাইবার থাকার কারণে এটি হজমে সাহায্য করে।

        হৃদরোগের ক্ষেত্রে কাঁচা কলা বেশ কার্যকরী। কারণ কাঁচা কলায় পটাশিয়াম রয়েছে যার হৃদরোগের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও কাঁচা কলায় ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস থাকার কারণে হাড় মজবুত হয়। তাহলে এখন স্পষ্ট যে, কাঁচা কলাতে কি কি পুষ্টিগুণ থাকে।

        কাঁচা কলার ভর্তা

        কাঁচা কলার ভর্তা অনেক সুস্বাদু একটি খাবার। কাঁচা কলা ভর্তার পাশাপাশি রান্না করেও খাওয়া যায়। তবে কাঁচা কলা ভর্তা করার জন্য প্রথমে কলা সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর সিদ্ধ কৃত কলা হাত দিয়ে মথে নিতে হবে। তারপর ভর্তা করার জন্য যে মশালা গুলো প্রয়োজন সেগুলো পরিমান মত দিয়ে ভর্তা করলে অনেক সুস্বাদু একটু ভর্তা তৈরি হয়।

        শেষ কথা

        পরিশেষে, কলা অনেক সহজলভ্য ফল হওয়ায় এটি সহজে পাওয়া যায়। আর এই কলা দামেও সস্তা হওয়ায় সবাই খেতে পারে। তাই কাঁচা কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। উপরের বিস্তারিত আলোচনায় কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাঁচা কলার খোসার ব্যবহার, কাঁচা কলা কিভাবে খেতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে।

        তাই আশা করি কাঁচা কলার সকল বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। আর পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন
        Next Post Previous Post
        No Comment
        Add Comment
        comment url