কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা-কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হয়
আসসালামু আলাইকুম। আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করা হবে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা
বিষয়। বিষয়টি হচ্ছে কাঁচা হলুদ নিয়ে। কাঁচা হলুদের সাথে আমরা সবাই পরিচিত এবং
এই কাঁচা হলুদ ত্বকে বেশি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ কাঁচ হলুদের যে গুনাগুন গুলো
রয়েছে সেগুলো আমাদের জানা উচিত।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjc3nS-jLVBvEFFAN5gfNPcYBiouWxCcL-Hfn1TaDMLTybROcAk7afbnFhye-Avh57Av7pBktMXW4Lj7lOfpbqnwaubypDwr2edePXmMyZ1MdElCHAotQSQ842VWfKbLuh6L2ERNPujECh7gmii97GOvVhr3aqI7TJoCH7vjVQgOQEbdGwrQtiBRflMm81Y/s16000/Feature-Image-Unicode8.jpg)
পেজ সূচিপত্রঃ কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা-কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হয়
ভূমিকা
কাঁচা হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে
থাকে। কাঁচা হল শুধু উজ্জ্বলতা বাড়ায় না, এর পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের
ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। কাঁচা হলুদ ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম
ইত্যাদি উপাদান গুলো রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকে জানি না, কাঁচা হলুদ খাদ্য
হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কাঁচা হলুদ সকালে খালি পেটে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা
বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক উপকার পাওয়া যায়। গুঁড়া হলুদ খেতে আমরা বেশি
অভ্যস্ত। এই গুঁড়া হলুদ আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই কাঁচা
হলুদ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে অনেক রোগের
অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই কাঁচা হলুদের উপকারিতা শেষ নেই। আর
কাঁচা হলুদের সব অজানা তথ্য জানার জন্য পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক এবার আমরা জেনে নিব, কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
এই কাঁচা হলুদ অনেক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। তাই প্রথমে জেনে নিব কাঁচা হলুদের
উপকারিতা গুলো কি কি।
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী। বদহজমসহ অন্যান্য সমস্যা দূর করে।
- কাঁচা হলুদ ডায়াবেটিসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- কাঁচা হলুদ ত্বকের ক্যান্সার দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- কাঁচা হলুদে ভিটামিন সি থাকে। ফলে সর্দি কাশি দূর করতে খুবই উপকারী।
- কাঁচা হলুদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করে দেয়।
- কাঁচা হলুদ অ্যান্টি-ইনফ্লামেন্টরি থাকায় শরীরের ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- কাঁচা হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেলস ইত্যাদি উপাদান গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- বিশেষ করে কাঁচা হল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার রয়েছে এই কাঁচা হলুদে।
যা মানব দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
এবার আমরা জেনে নিব কাঁচা হলুদের কি কি অপকারিতা রয়েছে সেই সম্পর্কে।
- কাঁচা হলুদ বেশি পরিমাণ খাওয়া হলে সেক্ষেত্রে পেটের সমস্যা হতে পারে।
- এলার্জির সমস্যা থাকলে কাঁচা হলুদ থেকে দূরে থাকুন।
- হলুদ বেশি খাওয়া হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া হয়ে গেলে পেটে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
সুতরাং উপরের অপকারিতা গুলো বিবেচনা করে আমাদের কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত। তা না
হলে উপরের সমস্যাগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা
আমরা সবাই জানি, কাঁচা হলুদ মুখে ব্যবহারের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
মুখে কাঁচা হলুদ দিলে ত্বক অনেক মসৃণ হয়। এছাড়াও মুখে কাঁচা হলুদ দেওয়ার আরও
উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ
- যদি মুখে ব্রণের দাগ থাকে, তবে এই কাঁচা হলুদ ব্যবহারের মাধ্যমে এই দাগ দূর হয়। এক্ষেত্রে হলুদ বাটার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগালে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- অনেক সময় মুখে কিছু অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়। এই লোম দূর করার জন্য হলুদ বাটার সাথে দুই যুক্ত করে মুখে ব্যবহার করতে হবে।
- মুখে অনেক সময় বলিরেখা দেখা যায়। এই বলিরেখা দূর করার জন্য কাঁচা হলুদের সাথে দুধের সর দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। তারপর এই মিশ্রণ ত্বকে ব্যবহার করলে এই সমস্যা দূর হয়।
- বাইরে রোদে ঘোরাঘুরির কারণে অনেক সময় চেহারা কালচে হয়ে যায়। এই দাগ দূর করার জন্য কাঁচা হলুদ বাটার সাথে মসুর ডাল বাটা এবং মধু একসঙ্গে করে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। তারপর এটি ব্যবহার করলে এই দাগ কমে যায়।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও ত্বকের প্রদাহ, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ইত্যাদি
ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খুবই উপকারী।
কাঁচা হলুদ দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়
এই কাঁচা হলুদ ত্বকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ বিভিন্ন উপাদানের
সাথে এই কাঁচা হলুদ যুক্ত করে ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে ত্বকের উজ্জ্বলতা সহ হারানো লাবণ্য ফিরে আসে। তবে কাঁচা হলুদের সাথে
দুধের সর মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে, সেটি ব্যবহার করলে ত্বকের মলিনতা ফিরে আসে
এবং ত্বক অনেক ফর্সা হয়। তবে এই কাঁচা হলুদ দুধের সর, দই, গোলাপজল ইত্যাদি
উপাদান গুলোর সাথে মিশিয়েও ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক অনেক মসৃণ হয়। তাই
উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে কাঁচা হলুদ ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন
দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে।
ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদ
মুখে ব্রণের সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। যৌবনকালে এই ব্রণের সমস্যা অনেক বেশি দেখা
যায়। ব্রণ হওয়ার ফলে ত্বক অনেক খারাপ হয়ে যায়। তাই এই ব্রণ দূর করতে কাঁচা
হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের সাথে কিছু পরিমাণ লেবুর রস
দিয়ে খুব সুন্দর একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগানোর পর অন্তত
10 মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। পরবর্তীতে এটি পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
তাহলে আপনার ত্বক অনেক মসৃণ হবে এবং ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম
কাঁচা হলুদ আমরা অনেকে ব্যবহার করি কিন্তু এটি ব্যবহারের নিয়ম কানুন অনেকেই
জানে না। চাচা হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। তবে শুধু কাঁচা
হলুদ ব্যবহার না করাই ভালো। কাঁচা হলুদের সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার
করতে হবে। এক্ষেত্রে দুধ, দই, লেবুর রস, শসার রস ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে
পারে। আর ত্বকে কাঁচা হলুদ রাতে ব্যবহার করাই উত্তম। দিনে ব্যবহার করা থেকে
বিরত থাকুন। কেননা দিনের বেলায় মুখে ফেসবুক লাগিয়ে বের হলে রোদে অনেক ক্ষতি
হয়।
আরও পড়ুনঃ আখের রস খাওয়ার নিয়ম
হলুদ বাটার সাথে লেবুর রস কিংবা শসার রস যুক্ত করে সেটি ব্যবহার করলে মুখের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। অনেকের ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে হলুদের সাথে দই
ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ত্বক অনেক মসৃণ এবং উজ্জ্বল করার জন্য
হলুদ বাটা সাথে গাজরের রস এবং অলিভ অয়েল একসঙ্গে করে ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও ত্বককে অনেক মসৃণ এবং সজীব করে তোলার জন্য হলুদ আরো বিভিন্নভাবে
ব্যবহার করা যায়।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা কি
কাঁচা হলুদ খাওয়া হয়, এটা আমরা অনেকেই জানি না। সাধারণত আমরা কাঁচা হলুদ
ত্বকে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কাঁচা হলুদ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। চলুন
জেনে নিই কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি।
- কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
- অনেক সময় দেখা যায় অল্প বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে। বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে এই কাঁচা হলুদ।
- কাঁচা হলুদ খেলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে না। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং ওজনও বাড়তে পারে না।
- কাঁচা হলুদ এন্টিবায়োটিকের কাজ করে থাকে। অর্থাৎ কোন জায়গায় ক্ষত থাকলে সেটি দ্রুত সারিয়ে তুলতে কাঁচা হলুদ উপকারী।
- এই কাঁচা হলুদ রক্তচাপ কমাতে বিশেষ অবদান রাখে।
- অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পিরিয়ডের সময় অনেকের ব্যথা হয়। কাঁচা হলুদ খেলে এই ব্যথা দ্রুত নিরাময় হয়।
- কাঁচা হলুদ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
- কাঁচা হলুদে কারকিউমিন নামক উপাদান থাকে। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
- কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বদহজম সমস্যা দূর হয়।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও কাঁচা হলুদ খেলে আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া
যায়। তবে কাঁচা হলুদ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা অনেক রয়েছে। অর্থাৎ নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদ
একসঙ্গে করে সেটি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে নিম পাতা এবং কাঁচা হলুদ উভয়ই
বেটে নিয়ে ছোট ছোট বড়ি করে নিন। এই বড়ি আপনি খেতে পারবেন এবং বাহ্যিকভাবে
ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথমে ই এই মিশ্রণ ব্রণ দূর করতে আপনার খুবই কাজ দেয়।
এছাড়াও এটি ওজন কমাতে অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। যেহেতু এটা আপনি বড়ি করে
খাচ্ছেন সেহেতু এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা
এলার্জি দূর করতেও খুবই কার্যকরী এই দুটির মিশ্রণ। বিশেষ করে এখানে নিমপাতা
এলার্জির ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এটির সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে এটি পেটকে
পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও এটি ক্যান্সারের কোষগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে নিম
পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকার বলে শেষ করার নয়। এর উপকার বলতে গেলে অনেক বড়
আলোচনা করা হয়ে যাবে।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা হলুদ আমরা অনেকেই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি। কাঁচা হলুদ খাদ্য
হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
কিন্তু অনেকের জানা নেই, কাঁচা হলুদ কিভাবে বা কি পরিমান খাওয়া উচিত। তাই এই
আলোচনায় জেনে নিন কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। কাঁচা হলুদ রাতে এবং
সকালে খেতে পারেন। তবে কাঁচা হলুদ ২৫০ মিলিগ্রাম এর বেশি খাওয়া উচিত নয়। ঘুম
থেকে ওঠার পর খালি পেটে খাওয়া যায়। আর যদি রাতে খেতে চান তাহলে দুধের সাথে
হলুদ যুক্ত করে খেতে পারেন। তবে খাওয়ার সময় অতিরিক্ত খাবেন না। এতে করে ক্ষতি
হবার সম্ভাবনা থাকে।
শেষ কথা
পরিশেষে, উপরের আলোচনায় অবশ্যই জানতে পেরেছেন যে, কাঁচা হলুদ শুধু রূপচর্চায়
নয় বরং বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও অধিক কার্যকরী। আশা করি আরো জানতে পেরেছেন যে,
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা, কাঁচা হলুদ কিভাবে ব্যবহার করা যায় ইত্যাদি
সম্পর্কে।
তাই কাঁচা হলুদ সম্পর্কিত সকল অজানা তথ্যগুলো যদি আপনার কোন উপকারে আসে, তাহলে
অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন। এবং এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।