কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা-কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। আমরা সবাই কোয়েল পাখির নাম শুনেছি এবং দেখেছি। কোয়েল পাখি এবং ডিম দুটোই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা
তাই আজকে কোয়েল পাখির ডিমের সকল পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং খাবার ফলে কি ক্ষতি হয় এটা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সুতরাং যাদের এই সকল বিষয় সম্পর্কে জানা নেই তারা গুরুত্ব সহকারে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃ কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা-কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম

ভূমিকা

কোয়েল পাখির ডিম অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। এই ডিমের প্রতি চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আকৃতিতে ছোট হওয়ায় এটি একসঙ্গে দুই থেকে তিনটি খাওয়া যায়। কোয়েল পাখির ডিম সহজলভ্য হওয়ায় এটি পেতে তেমন কষ্ট হয় না। আকৃতিতে ছোট হওয়ায় এটিকে আমরা অবহেলা করি। আসলে এটি অনেক পুষ্টিগুনে ভরপুর। যেমন: ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস,ভিটামিন বি, এ ভিটামিন বি ৬, খনিজ ,ইত্যাদি রয়েছে। কোয়েল পাখির ডিম শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণের পাশাপাশি কিডনির সমস্যা, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকরী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কোয়েল পাখির ডিম নিয়ে তেমন কোন আলোচনা করা হয় না। তাই চলুন জেনে নিন কোয়েল পাখির ডিমের সকল তথ্য সম্পর্কে।

শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা অনেক। তবে বর্তমানে শিশুদের কয়েল পাখির ডিম খাওয়ানোর প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কোয়েল পাখির ডিম খেলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়ে থাকে। ডিম আকারে ছোট হওয়ায় ক্যালোরির পরিমাণ কম। ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমান ১.৪%। 
তবে কোয়েল পাখির ডিমে যে প্রোটিন থাকে তা মুরগির ডিমের তুলনায় অনেক বেশি। এতে করে শিশুর ক্যালোরি এবং প্রোটিন দুটোই বৃদ্ধি পায়। অ্যান্টিবডি তৈরিতে খুবই কার্যকরী এই ডিম।। এমনকি শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক বৃদ্ধিও ঘটে থাকে। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক উপকারী একটি খাবার।

কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার উপকারিতা

এ পর্যায়ে আমরা জেনে নেব কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। কোয়েল পাখি দেখতে ছোট এবং তার ডিমও অনেক ছোট আকৃতির। কোয়েল পাখির ডিমে যে উপাদানগুলো রয়েছে তা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোয়েল পাখির ডিম খেলে যে উপকার গুলো হয় সেগুলো হচ্ছে।
  • যেহেতু কোয়েল পাখির ডিমে আয়রন এবং প্রোটিন রয়েছে, সেহেতু এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে খুবই উপকারী।
  • কোয়েল পাখির ডিমে সেলেনিয়াম নামক উপাদান থাকায় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
  • কোয়েল পাখির ডিমে আয়রন থাকায় এটি দেহের রক্তস্বল্পতা পূরণে সাহায্য করে এবং লাইসিন নামক উপাদান বিদ্যমান থাকায় অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
  • যাদের অ্যালার্জি, সর্দি ইত্যাদি রয়েছে তারা কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। কারণ কোয়েল পাখির ডিম এগুলোর প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
  • এই ডিমে ভিটামিন বি উপস্থিত থাকায় ত্বক ও চুলের যত্নে সাহায্য করে থাকে।
  • যদি কিডনি ও লিভারের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। ডিম এগুলো নিরাময়ে অধিক কার্যকরী।
  • কোয়েল পাখির ডিম হজম শক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। পাশাপাশি এটি অ্যাসিডিটি নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে।
সুতরাং কোয়েল পাখির ডিমে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আর উপরোক্ত সুবিধাগুলো ব্যতীত আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় এই কোয়েল পাখির ডিমে।

কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক

যেকোনো জিনিসের ভালো এবং মন্দ দুটোই থাকা স্বাভাবিক। অর্থাৎ ভালোর পাশাপাশি কিছু খারাপ দিক থাকে। এক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতার পাশাপাশি সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং ডায়াবেটিস এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নেই তারা কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ ফ্যাটের পরিমাণ বেশি রয়েছে। তবে যে কোন জিনিস খাওয়ার আগে অবশ্যই তার ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে দেখা যাচ্ছে উপকারিতার চাইতে অপকারিতা অনেক কম। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়

কোয়েল পাখির ডিমে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকায় এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। অ্যান্টিবডি তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে এই ডিম। শিশুদের ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী এই ডিম। শিশুর মানসিক কিংবা শারীরিক বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ডিমে মুরগির ডিমের তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছে। তাই এই ডিম বড় থেকে শুরু করে ছোটরা পর্যন্ত প্রতিদিন ২-৩ টি খেতে পারেন।

কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ

আমরা ইতিপূর্বে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং কিছু পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনেছি। এখন বিস্তারিতভাবে জানবো কোয়েল পাখির ডিমের কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। কোয়েল পাখির ডিম আকৃতিতে অনেক ছোট হলেও এর পুষ্টি উপাদান অনেক। কোয়েল পাখির ডিমে ক্যালরি সহ আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ,বি ,প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও কোলেস্টেরল রয়েছে ৭৬ মিলি। ভিটামিন বি৬,থায়ামিন,খনিজ ইত্যাদি উপাদান গুলো উপস্থিত। এই উপাদানগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। যা শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে।

কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম কানুন সম্পর্কে। কোয়েল পাখির ডিম দিনে দুই থেকে তিনটা খেতে পারেন। এই ডিম খাওয়ার ফলে শরীরের পুষ্টির চাহিদাগুলো পূরণ হয় এবং শরীরের কার্য ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। আমরা অনেকেই ডিম খায় কিন্তু আমাদের অনেকের জানা নেই কোয়েল পাখির ডিম কিভাবে খেতে হবে। কিন্তু এই ডিম কিভাবে খেতে হবে সেটি জানা প্রয়োজন।
ডিম এবং চিনি কখনো একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এখান থেকে অ্যামাইনো এসিড উৎপন্ন হয়। যা রক্ত জমাট বাঁধতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও ডিম এবং চা কখনোই একসঙ্গে খাওয়া উচিত হবে না। কারণ এ দুটো একসঙ্গে খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমরা সঠিক নিয়মে ডিম খাই এবং সুস্থ থাকি। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনা

কোয়েল পাখির ডিমের সাথে মুরগির ডিমের তুলনা করলে দেখা যায় কোয়েল পাখির ডিম আকারে ছোট এবং মুরগির ডিম আকারে বড়। প্রতিদিন মুরগির ডিম খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিম খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মুরগির ডিমে কোলেস্টেরল রয়েছে ৪%, অপরদিকে কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ১.৪%।
কিন্তু মুরগির ডিম থেকে কোয়েল পাখির ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিমে যে আয়রন রয়েছে তা মুরগির ডিম থেকে ৫ গুন পরিমাণ বেশি। এগুলো ছাড়াও ফসফরাস বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। সুতরাং আলোচনা মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, কোয়েল পাখির ডিম অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। এবং দামে সস্তা হওয়ায় এটি সবার ক্রয়ের মধ্যে থাকে।

কোয়েল পাখি কত দিনে ডিম পারে

কোয়েল পাখি ডিম দেওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই কোয়েল পাখি ডিম দেয়। তবে এটা অনেকের জানা নেই যে কোয়েল পাখি কত দিনে ডিম পাড়ে। সাধারণত ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এরা ডিম দেয়। তবে কি খাবার দেওয়া হচ্ছে, কোন পরিবেশে তাদের লালন পালন করা হচ্ছে, এমনকি পাখিগুলো কোন জাতের এই বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে ডিম দেওয়ার সময় কম বেশি হতে পারে। তবে উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খুবই গুরুত্ব দিতে হবে।

কোয়েল পাখি ডিম না দেয়ার কারণ

কোয়েল পাখির ডিম না দেওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ডিম দেওয়া বা না দেওয়া বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন: খাবার, পরিবেশ, কোন জাতের পাখি ইত্যাদি। কোয়েল পাখির খাবারের প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হবে। তাদের সঠিক সময়ে সঠিক খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও আরও একটি কারণ রয়েছে তা হচ্ছে পরিচর্যা। আসলে যে কোন জিনিস ভালো ভাবে বেড়ে ওঠা বা না উঠা নির্ভর করে সে জিনিসের পরিচর্যার উপর। তাই সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে ডিম নাও দিতে পারে।
সময় দেখে পাখি লালন পালন করা উচিত। অর্থাৎ সময় বলতে শীতকাল বা গরমকালকে বোঝানো হয়েছে। কারণ কোয়েল পাখি শীতকালে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ডিম না দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে পরিবেশ। অর্থাৎ নোংরা স্যাতসেতে এবং যেখানে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারেনা এমন জায়গায় লালন পালন করলে পাখি ডিম নাও দিতে পারে। তাই আমরা পাখি লালন-পালন করার সময় উপরোক্ত বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে পাখি এক্ষেত্রে সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে না এবং ডিম দেওয়া বন্ধ করে দিবে।

কোয়েল পাখির খাবার

অনেকে না জানার কারণে কোয়েল পাখিকে বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে থাকে। এজন্য কোয়েল পাখি দ্রুত বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তাই সঠিক খাবার সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে লেয়ার বা পল্ট্রি মুরগির যে ছোট ছোট দানাযুক্ত খাবারগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও চাউল, খুদ দেওয়া যেতে পারে।

কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার লক্ষণ

কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান লক্ষণ হচ্ছে এর ওজন। অর্থাৎ ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেলে ডিম দ্রুত পাড়বে। তাই দ্রুত ওজন বৃদ্ধির জন্য সঠিক সময়ে সঠিক খাবার সরবরাহ করুন। আর কোয়েল পাখিকে কি খাবার দিতে হবে সেটি ওপরে আলোচনা করা হয়েছে।

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায় ,কোয়েল পাখির ডিমের গুরুত্ব অপরিসীম। কোয়েল পাখির ডিমে যে পুষ্টিকর উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলো শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখে। আর এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা কি, ডিম খাবার নিয়ম, কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ কি কি রয়েছে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।

তাই আশা করি উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনি কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কে সকল বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আর যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিন। পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url