গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয়-গলায় কফ আটকে থাকলে করনীয় কি



আসসালামু আলাইকুম। আজকের আলোচনার বিষয় একটু ব্যতিক্রমধর্মী। আমরা খাওয়ার সময় অনেক কিছু গলায় আটকে যাই। খেতে খেতে হঠাৎ করে গলায় কিছু আটকে গেলে অনেক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয় কি এ বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে।
গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয়
এই সমস্যাটা সাধারণত সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। কিন্তু এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই চলুন জেনে নিই গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয় গুলো কি কি এবং কোন বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় রাখা উচিত ইত্যাদি সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয়-গলায় কফ আটকে থাকলে করনীয় কি

ভূমিকা

খাবার গলায় আটকে যাওয়া স্বাভাবিক হলেও অনেক ক্ষেত্রে এটি অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। গলায় কাঁটা আটকে যাবে এই ভয়ে অনেকে মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকে। গলায় কিছু আটকে গেলে মৃত্যুও হতে পারে। তবে খাদ্যগুলো ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। এক্ষেত্রে খাবার আটকে গেলে, তখন ফুসফুসে ঠিকমতো অক্সিজেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। যখন গলায় খাবার আটকে যাই তখন নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। তাই গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয় কি তা জানার জন্য মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়তে হবে। আর অবহেলা না করে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।

গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি

অনেক সময় এরকম মনে হয়, গলায় কিছু আটকে আছে। তখন একটু বিরক্তিকর বোধ হয়। তখন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। যেমন: বমি বমি ভাব হয়। যখন এসিডিটি রিফ্লেক্স হয় তখন এই সমস্যাটা বেশি দেখা দেয়। তখন মনে হয় গলায় কিছু চেপে বসে আছে। যখন এই সমস্যা হয় তখন আমরা বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের ওষুধ খেয়ে থাকি। আরো কিছু কারণে গলায় এরকম অনুভূতি হয়। যেমন: গলায় যদি টনসিল পাথর হয় সেক্ষেত্রে এরকম অনুভূতি হয় এবং গলা ব্যথা পর্যন্ত হয়ে যায়।
অনেক সময় দেখা যায় এটি এলার্জির কারণে হতে পারে। কারণ এলার্জির কারণেও অনেক সময় গলা ফুলে যেতে দেখা যায়। তখন মনে হয় গলায় কিছু আছে এরকম অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আরো কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে এরকম অনুভূতি হয়।

গলায় কিছু আটকে আছে মনে হয় কেন

গলাতে কিছু আটকে আছে যদি এরকম মনে হয় তখন খুব বিরক্তি লাগে। এই সমস্যা হলে অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ পর্যন্ত নিয়ে থাকে। তবে আগে আমাদের জানতে হবে এই সমস্যাটা কি কারণে হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যাটা বেশি হয়ে থাকে এসিডিটির কারণে। এসিডিটি হলে বুক জ্বালাপোড়া সহ এটি উপরের দিকে উঠে আসে। এরকম হলে তখন মনে হয় গলার কাছে পুটলার মত কিছু রয়েছে। আবার অনেকেই মনে করেন, ক্যান্সার হয়েছে তাই এরকম মনে হচ্ছে। আসলে ক্যান্সারের কারণে এই বিষয়টি হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। প্রায় এই সমস্যাটা দেখা যায়।

গলায় কিছু আটকে গেলে দোয়া

গলায় কিছু আটকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকি কিংবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। তখন আমরা এই গলাকে পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। আসলে আমরা অনেকেই জানিনা গলায় কিছু আটকে গেলে, বিশেষ করে মাছের কাঁটা যদি আটকে যায় তাহলে দোয়া পাঠের মাধ্যমে সেটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তাই পবিত্র হয়ে, নিচের দোয়াটি বিসমিল্লাহ বলে পড়ুন। ইনশাআল্লাহ এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
فَلَوْلَآ إِذَا بَلَغَتِ ٱلْحُلْقُومَ
উচ্চারণ: ফালাওলা ইযা -বালাগাতিল হুলকুম।
উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে থাকুন আর ঢোক গিলতে থাকুন।ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। তাই গলায় কিছু আটকে গেলে ধৈর্য না হারিয়ে এই দোয়াগুলো পড়তে থাকুন। আশা করি আল্লাহর রহমতে সুফল পাবেন।
গলায় কিছু আটকে যাওয়া

গলায় কাটা বিঁধলে করণীয়

মাছ সবার কাছেই পছন্দের খাবার। কিন্তু এই মাছ খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ অসাবধানতার জন্য গলায় কাটা আটকে যেতে পারে। কাটা আটকানোর ভয়ে অনেকে মাছ খেতে চায় না। তাই যখন কাটা আটকে যায় তখন কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে এই কাঁটা নামানো সম্ভব। চলুন তাহলে জেনে নিই সেই উপায়গুলো কি কি।
  • কাটা আটকালে অলিভ অয়েল তেল খেতে পারেন। কারণ অলিভ অয়েল খুবই পিচ্ছিল তেল।
  • কাটা নামানোর ক্ষেত্রে কলা খেলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ কলাও অনেক পিচ্ছিল প্রকৃতির খাবার।
  • কাটা আটকে গেলে শুকনো ভাত গিলে খেতে হবে।
  • কাটা আটকালে সেক্ষেত্রে কোকাকোলা খেলে খুবই কার্যকারী ফল দেয়।
  • ভিনেগার কাঁটা নামানোর ক্ষেত্রে খুব উপকারী।
উপরের পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে সহজে কাটা নামাতে পারবেন এবং আশা করি অনেক ভালো ফলাফল পাবেন। এই পদ্ধতিগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই কাটা নামানো সম্ভব।

মাছের কাটা বের করার উপায়

মাছ খেলে কাটা আটকে যেতে পারে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এই কাটা নামানোর কিছু পদ্ধতি বা উপায় আছে তা অনুসরণ বা ব্যবহারের মাধ্যমে এই কাটা নামানো বা বের করা যায়। এক্ষেত্রে হালকা গরম পানিতে কিছু লেবুর রস মিশিয়ে খেলে কাঁটা দ্রুত নেমে যায়। আবার লেবুর সাথে লবণ দিয়ে খেলে কাটা নেমে যায়। যদি শুকনো মুড়ি খেতে পারেন তাহলে অনেক ভালো কাজ হয়। আবার জোরে জোরে কাশি দিলে কাশির চাপে কাঁটা বের হতে পারে। তাই এই পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করুন ইনশাল্লাহ ভালো ফলাফল পাবেন।

বাচ্চাদের গলায় কাটা নামানোর দোয়া

কাটা আটকে যাওয়ার ভয়ে মানুষ মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিবে এমন নয়। কাটা আটকে যাবে এটা হতে পারে। কিন্তু এ কাটা নামানোর ক্ষেত্রে দোয়া রয়েছে। তবে অনেকে জানেন না, কাটা নামানোর দোয়া আছে কিনা এবং যদি থেকে থাকে তাহলে কোন দোয়া পড়তে হবে। তাহলে আজকের এই আলোচনায় জেনে নিন, গলায় কাটা আটকে গেলে কোন দোয়া পড়তে হবে। দোয়াটি নিম্নরূপঃ

فَلَوْلَآ إِذَا بَلَغَتِ ٱلْحُلْقُومَ
উচ্চারণঃ ফালাওলা ইযা-বালাগাতিল হুলকুম
তাই আশা করি, গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয় কি তা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন। আর উপরোক্ত দোয়াটি পড়লে ইনশাআল্লাহ কাটা নেমে যাবে।

ঘন ঘন কফ আসার কারণ কি

কফ আসলে বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, যদি সর্দি লেগে থাকে তখন সর্দির কারণে বুকে কফ জমতে পারে। এক্ষেত্রে কাশি দিলে সেই কফ গুলো একটু একটু করে বের হয়। আবার ফুসফুস যদি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে কফ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং কাশির সাথে বেরিয়ে আসে। যারা ধূমপান করেন তাদের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকদিন থেকে ধূমপান করার ফলে কাশির সঙ্গে কফ বের হতে পারে। তাই এই কফ হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করুন।

গলায় কফ আটকে থাকার কারণ

বিভিন্ন কারণে গলায় কফ আটকে যেতে পারে। আমাদের জানতে হবে গলায় কফ আটকে থাকে কিসের কারণে। পরবর্তীতে কারণ হলো পর্যালোচনা করে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গলায় কফ আটকে থাকার কারণ কি।
  • যদি শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে কফ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  • ব্রঙ্কাইটিস রোগ হলে কফ হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা ধূমপান করে তাদের এই রোগটি হতে পারে।
  • যদি ঠান্ডা লেগে যায়, সেক্ষেত্রে কফ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • সি এফ রোগ হলে শ্লেষ্মা তৈরির মাধ্যমে কফ জমে থাকে।

বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায়

বুকে কফ জমলে আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খায় কিংবা চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকি । যাতে করে কফ ভালো হয়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই জানা নেই, বুকের কফ ওষুধ সেবন না করে, ঘরোয়াভাবে দূর করা যায়। তাহলে চলুন জেনে নিন কিভাবে বুকের কফ বের করা যায়।
  • হালকা গরম পানির সাথে মধু মিশে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • হালকা গরম পানির সাথে ভিনেগার দিয়ে তাতে কিছু পরিমাণ মধু যুক্ত করে খেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
  • সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে লবণ পানি দিয়ে কুলি করলে বুকের কফ ভালো হয়।
  • পুষ্টিকর খাবার খেলে জমে থাকা কফ ভালো হয়। যেমন এলাচ, আদা ,গোলমরিচ ইত্যাদি।
  • পিপারমিন্ট চা খেলে কফের সমস্যা সমাধান হয়। এটি কফের ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে।
তাই উপরের উপায়গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আমরা ঘরোয়াভাবে কফ বের করতে পারি।এছাড়াও আরও বিভিন্ন উপায় রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে অনেক ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

বুকের কফ বের করার সিরাপ

বুকে কফ জমলে শ্বাসকষ্ট সহ কাশি হয়ে থাকে। আর এই কফ জমে থাকলে অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই কফ বের করার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। কিছু সেরা হয়েছে যেগুলো কম বের করার ক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সেগুলো হচ্ছে :-
  • Ambrox
  • Ocof
  • Tuspel
  • N-Acetylcysteine
  • Adovas
  • Tusca plus
উপরোক্ত সিরাপ গুলো কফ বের করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং অত্যন্ত উপকারী। তবে আমি মনে করি উপরোক্ত সিরাপ গুলো খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষ কথা

গলাতে কিছু আটকে গেলে সেটা সবার কাছেই অস্বস্তিকর একটা বিষয়। তবে গলাতে যা কিছুই আটকে যাক না কেন, সেটা নিরাময়ের জন্য অবশ্যই কিছু উপায় অবলম্বন করা উচিত। আর এই উপায় গুলো সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি উপরের বিষয়গুলো জানতে পেরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আর অবশ্যই বেশি বেশি শেয়ার করে দিন যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url