খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে খুবই একটু জনপ্রিয় ফল ডালিম নিয়ে।
এই ফলটি এতই জনপ্রিয় যে, এর গুনাগুন সম্পর্কে সকলেই অবগত রয়েছেন। কিন্তু খালি
পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু আমরা কি তা জানি?
শুধু আমরা জানি ডালিম খুব পুষ্টিকর একটি ফল। তাই পোস্টটি না এড়িয়ে চলুন আমরা
জেনে নিই খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু রয়েছে এবং ডালিমের কি কি
পুষ্টিগুণ রয়েছে ইত্যাদি সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্রঃ খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
- ভূমিকা
- ডালিমের উপকারিতা ও অপকারিতা
- ডালিমের বিচির উপকারিতা
- ডালিমের খোসার উপকারিতা
- খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
- ডালিম খাওয়ার সঠিক সময়
- ডালিম খেলে কি রক্ত বাড়ে
- ডালিম ও বেদানার পার্থক্য
- শেষ কথা
ভূমিকা
ডালিম খুব পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল হওয়ায় এটি সবার কাছে পছন্দনীয়। ছোট থেকে শুরু করে বড় পর্যন্ত সকলেই এটি খেতে পছন্দ করে। ডালিম শুধু পুষ্টিকর ফল নয় এটি বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমের শুধু ফল নই, এর শিকড়, ফুল, খোসা ইত্যাদি সকল অংশ রোগে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আমাদের না জানার কারণে ডালিমের খোসা ফেলে দিই। ডালিম ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী।
আরও পড়ুনঃ
কাচা ছোলা ও কাচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
অনেকের দেখা যায় নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। এই রক্ত পড়া বন্ধ করতেও ডালিম ফুলের রস
খুবই উপকারী একটি উপাদান। এগুলো ছাড়াও ডালিম এ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে।
যেগুলো আমাদের শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণে সাহায্য করে। এই ডালিম পুষ্টিগুণে ভরপুর
হওয়ায় খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতাও রয়েছে অনেক। তাই ডালিমের সকল
কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত সঙ্গেই থাকুন।
প্রিয় পাঠক এবার আমরা আলোচনা করব ডালিমের কিছু অপকারিতা নিয়ে। ডালিম খাওয়ার অপকারিতা নেই বললেই চলে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি না খাওয়াই উচিত। যেমন
ডালিমের উপকারিতা ও অপকারিতা
ডালিম খেলে যে রকম উপকার পাওয়া যায় সেরকম এর অপকারও রয়েছে। ডালিম খেলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি গুণাগুণ পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আবার এটি খেলে যে শুধু উপকার পাওয়া যাবে এমনটি নয়, ডালিম খাওয়ার ফলে কিছু অপকারিতাও দেখা যায়। চলুন প্রথমে আগে জেনে নিন উপকারগুলো কি কি।- ডালিম খেলে হাড়ের ব্যথা অনেক অনেকাংশে কমে যায়। কারণ ডালিমে আর্থ্রাইটিস নামক উপাদান থাকে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে থাকে।
- রক্তবৃদ্ধি করে রক্তশূন্যতা দূর করে এই ডালিম ফল।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। যেমন : স্তন ক্যান্সার।
- দেহের দুর্বলতা দূর করে, দেহকে শক্তিশালী করে তোলে।
- ডালিম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ডালিম খেলে হৃদরোগ হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
প্রিয় পাঠক এবার আমরা আলোচনা করব ডালিমের কিছু অপকারিতা নিয়ে। ডালিম খাওয়ার অপকারিতা নেই বললেই চলে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি না খাওয়াই উচিত। যেমন
- যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য ডালিম খুব উপকারী কিন্তু নিম্ন রক্তচাপ থাকলে ডালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ ডালিম রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
- যে সকল ব্যক্তির সর্দি-কাশি থাকে তারা ডালিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে ডালিম একটু ঠান্ডা প্রকৃতির হওয়ায় এটি খেলে সমস্যা হয়।
- এখানে এলার্জির কথাও উল্লেখ করার মতো। কারণ ডালিমের রস খেলে এলার্জি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অনেক মানসিক রোগী রয়েছে যারা প্রতিনিয়তই ওষুধ খেয়ে থাকেন। এই ওষুধ চলাকালীন সময়ে যদি ডালিমের রস খাওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা ডালিম খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
ডালিমের বিচির উপকারিতা
ডালিমের বিচির উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ডালিমের বিচিতে অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। তাই ডালিমের বিচি খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে-- কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ উপশমে খুবই কার্যকরী।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক।
- ডালিমের বিচি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- পেটের পিড়া দূর করতেও অনেক উপকারী।
- ডালিমের বিচি খেলে আমাশয় রোগের ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- ডালিমের বিচি হজমে সাহায্য করে থাকে।
- ডালিমের বিচিতে অনেক ফাইবার থাকে যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে,শুধু যে ডালিমে উপকার রয়েছ এমন নয়
এর বিচিতেও উপকার অনেক।
ডালিমের খোসার উপকারিতা
শুধু ডালিমের বিচিতে কিংবা এর দানাতে উপকার থাকে না, এর খোসাতেও অনেক উপকার রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নিই -ডালিমের খোসাতে কি কি উপকার রয়েছে।- হাড়কে মজবুত করতে ডালিমের খোসার ভূমিকা অনেক রয়েছে।
- মুখের বিভিন্ন দাগ সহ ব্রণ উপশমে সাহায্য করে।
- মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং মসৃণ করতে ডালিমের খোসার গুড়া অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান।
- ডালিমের খোসা পরিপাকে খুবই উপকারী।
- মাথার খুশকি দূর করে, চুল পড়া বন্ধ করতে ডালিমের খোসা খুবই কার্যকরী। এক্ষেত্রে ডালিমের খোসার গুঁড়া ব্যবহার করতে হবে।
- যদি গলায় ব্যথা থাকে তাহলে ডালিমের খোসার গুড়া হালকা গরম পানিতে দিয়ে কুলি করলে সেই ব্যথা দূর হয়।
খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
ডালিম পুষ্টিকর ফল হওয়ায় এর কার্যকারিতা অনেক। ডালিমে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন
থাকায় এটি শরীরে পুষ্টি যোগায়। আমরা সাধারণত ফলমূল ভরপেটে খেয়ে থাকি।কিন্তু
কিছু কিছু ফল রয়েছে যেগুলো খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়।সেরকম একটি ফল
হচ্ছে ডালিম। কিন্তু আমাদের জানা নেই খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কে। খালি পেটে ডালিম খেলে অনেক উপকার রয়েছে। যেমন:
- যদি খালি পেটে ডালিম খাওয়া হয় তাহলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গুলো কমে যায় এবং ফ্যাটি কোষগুলো কমে যায়। এই চর্বি কমার ফলে দেহের ওজন কমে যায়। অর্থাৎ ওজন কমাতে খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
- দেহে যদি রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে ডালিম খেলে এই রক্তস্বল্পতার অভাব পূরণ হয়।
- এক্ষেত্রে যদি আপনি মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে চান তাহলে ডালিমের রস অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান।
- ডালিম খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
আমরা এর আগে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা এগুলো সম্পর্কে জেনেছি। এবার
জানবো গর্ভাবস্থায় ডালিম খেলে কি হয়। অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় ডালিম খাওয়ার
উপকারিতা গুলো কি কি সে সম্পর্কে জানব।
- ডালিম আঁশযুক্ত বা ফাইবার সমৃদ্ধ ফল।যা হজম ক্রিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব রাখে।
- ডালিম খেলে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়ে। এক্ষেত্রে গর্ভের শিশুর ব্রেইন বাড়াতে সাহায্য করে এই ডালিম।
- গর্ভাবস্থায় আয়রন প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হয়। ডালিম খাবার ফলে এই আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়।
- গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ডালিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ডালিম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল হাওয়ায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
ডালিম খাওয়ার সঠিক সময়
ডালিম একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত। এই সময় ডালিম খেলে দেহের অনেক উপকার হয়। সেই সময়টি হচ্ছে সকালবেলা। এই সকালবেলা হচ্ছে ডালিম খাবার একটি উপযুক্ত সময়। ডালিমের অনেক পুষ্টিগুণ থাকে। সকালবেলা ডালিম খেলে শরীরে অনেক পুষ্টি সরবরাহ হয়, যা আপনার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এটি রাতে খাওয়া উচিত নয়। কারণ ডালিম ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য হওয়ায় এটি হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই ডালিম রাতে না খাওয়াই উচিত।
আরও পড়ুনঃ
নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ডালিম খেলে কি রক্ত বাড়ে
ডালিম খেলে রক্ত বাড়ে কিনা এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। আসলে ডালিম খেলে রক্ত বাড়ে কিনা এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত তথ্য জেনে নিব। এই তথ্য জানার জন্য মনোযোগ সহকারে একটু পড়ুন। ডালিম ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য অর্থাৎ ডালিমে ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি থাকে। এগুলো রক্তবৃদ্ধি করতে বা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ডালিম অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান।ডালিম ও বেদানার পার্থক্য
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো ডালিম ও বেদানার মধ্যে পার্থক্য কি। আসলে ডালিম ও বেদানার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। শুধু আকার ও রঙের মধ্যে একটু পার্থক্য রয়েছে। ডালিম বা বেদানা বলেন, এর বৈজ্ঞানিক নাম punica granatum । ইংরেজিতে একে pomegranate বলে। এখানে ডালিম ও বেদানার স্বাদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। বেদানা একটু মিষ্টি বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু ডালিম একটু কম মিষ্টি হয়ে থাকে। আরেকটি পার্থক্য বোঝা যায় সেটি হচ্ছে ডালিমের দানা একটু গোলাপী প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং বেদানার দানা লাল হয়ে থাকে। ডালিম একটু বড় আকৃতির হয় এবং বেদানা ডালিমের তুলনায় একটু ছোট হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ডালিম ও বেদনা দুটো একই। তাহলে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম ডালিম ও বেদানা আসলে একই না ভিন্ন প্রকৃতির।শেষ কথা
অবশেষে, ডালিমের যে উপকারিতা অনেক রয়েছে, এতে কোন সন্দেহ থাকে না। ডালিমের সকল পুষ্টিগুণ বা গুনাগুন সম্পর্কে আমরা ধারণা পেয়েছি। ডালিমের কি কি ভিটামিন রয়েছে, ডালিম খেলে কি হয়, খালি পেটে ডালিম খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু রয়েছে, ডালিম খাবার উপযুক্ত সময় কোনটি ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা ধারণা পেয়েছি।
তাই আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি ডালিম সম্পর্কে সকল বিস্তারিত তথ্য জানতে
পেরেছেন এবং এই আর্টিকেলের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। তাই অন্য জন যেন উপকৃত হতে
পারে সেজন্য আর্টিকেলটি বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।